কাশ্মীর ফাইলস: নাদাভের সমর্থনে গলা তুললেন আরও তিন জুরি, ‘হিংসাত্মক ও প্রোপাগান্ডা’ বলেই মত তাঁদের
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ (The Kashmir Files) নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। গোয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (IFFI) মঞ্চে এই ছবিকেই ‘মোটাদাগের প্রোপাগান্ডা’ বলে উল্লেখ করেছেন জুরি বোর্ডের হেড, ইজরায়েলি পরিচালক নাদাভ লাপিড। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, হিংসা ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই ছবি নির্মিত এবং এটি চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়। এবার তাঁর কথাকেই সমর্থন করলেন জুরির অন্য তিন বিদেশি সদস্য।
এদিন জুরির সদস্য, আমেরিকান প্রযোজক জিঙ্কো ঘোষ, ফ্রেঞ্চ ফিল্ম এডিটর প্যাস্কেল চ্যাভেন্স, ফ্রেঞ্চ ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার জাভিয়ের অ্যাঙ্গুলো বার্তুরেন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, জুরির সদস্য হিসেবে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’কে কোনও অ্যাওয়ার্ড দেননি তাঁরা। এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত ছিল।
তাঁদের বয়ানে, ‘আমাদেরও দেখে মনে হয়েছে, এটি সত্যিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি একটি ছবি, যা সত্যিই হিংসাত্মক। শৈল্পিক দিক দিয়ে বিচার করলেও ছবিটি এই চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানোর যোগ্য নয়। এই মঞ্চকে রাজনৈতিক উদ্দেশে কাজে লাগানো ঠিক নয়। আমরা নাদাভ লাপিডকে সমর্থন করছি। তাঁকে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তা অনুচিত।’
প্রসঙ্গত, নাদাভ লাপিডের বক্তব্যের পরে যখন বিতর্কের ঝড় ওঠে, তখন জুরির একমাত্র ভারতীয় সদস্য পরিচালক সুদীপ্ত সেন জানিয়েছিলেন, নাদাভ লাপিড যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। তবে আজ বাকি তিন জুরি সদস্যের বয়ানে বোঝা গেল, একথা নাদাভ লাপিডের ব্যক্তিগত বক্তব্য নয়, বোর্ডের আলোচিত সিদ্ধান্ত।
বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস্’ ছবিটি নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্ক রয়েছে। একাংশের মানুষের দাবি, এই সিনেমায় নয়ের দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর যে অত্যাচার হয়েছিল, তার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর পাল্টা মত হিসেবে উঠে এসেছে, ছবিটিতে একপেশে ভাবে পণ্ডিতদের দিকটি এমনভাবেই দেখানো হয়েছে, যাতে সত্যগোপন করা হয় এবং কাশ্মীরের মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ চাগিয়ে তোলা হয়। তবে এই বিতর্কের মাঝেই বিপুল ব্যবসা করে নিয়েছে ছবিটি।
এবার গোয়ার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (IFFI) মোট ১৫টি ছবি নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হয়, যাতে দেখানো হয়েছে এই কাশ্মীর ফাইলসও। জুরি বোর্ডের সদস্য নাদাভ লাপিড এই ছবি দেখেই বিতর্ক উস্কে দেন। এই ধরনের ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয় বলেও জানান লাপিড। নাদাভের মন্তব্যে পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী, সিনেমার অভিনেতা অনুপম খের– সকলেই ক্ষোভ উগরে দেন।
এমনকি ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত নায়োর গিলনও তীব্র নিন্দা করেন লাপিডের। তাঁর হয়ে ক্ষমাও চেয়ে নেন নায়োর গিলন।
এর পরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন নাদাভ লাপিড নিজেও। তিনি জানান, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ভাবাবেগে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁর নেই, যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের অপমানও করতে চাননি তিনি। তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যাঁদের খারাপ লেগেছে, তাঁদের কাছে পরিচালক ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।
খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২২/একে


