বাংলায় বিজেপি আছে শুধু ফেসবুকে, অর্জুনের তিরে ‘মোদী-বন্ধু’ আম্বানি-আদানিও

মহাভারতের অর্জুন লক্ষ্যভেদে স্থির ছিলেন। আর ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং (Arjun Singh), তাঁর লক্ষ্য কী? কোথায় চোখ স্থির রেখেছেন তিনি? তাঁর সাক্ষাৎকার নিলেন অমল সরকার।

অর্জুন সিংয়ের বক্তব্য, “এখন সবার ঘুম ভেঙেছে। আমি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছি। এখন অনেকের ঘুম ভেঙেছে। তারা মুখ খুলছে আস্তে আস্তে।”

কিন্তু এত কিছু থাকতে পাটের দাম নিয়েই কেন জেদ ধরেছেন? ব্যারাকপুরের তো সমস্যার অভাব নেই
অর্জুনের (Arjun Singh) কথায়, “এই লড়াইয়ের সঙ্গে গোটা বাংলার স্বার্থ জড়িত। কেন্দ্রীয় সরকার পাটের দামের যে নীতি করেছে তাতে পাট চাষি থেকে জুটমিল শ্রমিক, কেউ রক্ষা পাবে না।”
ব্যারাকপুরের সাংসদের অভিযোগ, পাট নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এর পিছনে আছে আম্বানি-আদানিদের প্লাস্টিক শিল্পের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা। সেই কারণে এমনভাবে পাটের দাম স্থির করা হয়েছে যাতে জুটমিলগুলি বন্ধ হয়ে যায়। চাষিরাও না খেয়ে মরে। পাটের বস্তার জায়গায় তখন প্লাস্টিকের বস্তা ঢুকবে

অর্জুনের (Arjun Singh) আরও অভিযোগ, ইতিমধ্যেই জুটের ৪০ শতাংশ মার্কেট প্লাস্টিক দখল করে নিয়েছে। আর প্লাস্টিক শিল্পের বড় জায়গা দখল করে আছেন আম্বানি-আদানিরা। ওঁদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই জুট মিলগুলিকে টার্গেট করা হয়েছে।

 ব্যারাকপুরের বিজেপি (BJP) সাংসদকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি যে দুই শিল্পপতির (মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানি) নাম করছেন তাঁরা আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অত্যন্ত কাছের মানুষ হিসাবে পরিচিত। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদীর জমানায় এই দু’জনের মতো হাতেগোনা কয়েকজনেরই শিল্প, ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। আপনি কি দল-বিরুদ্ধ কথা বলছেন না?
অর্জুনের জবাব, “কে কার ঘনিষ্ঠ আমি জানি না। খোঁজও রাখি না। আমি আমার এলাকার, আমার রাজ্যের স্বার্থে কথা বলছি। আমি মনে করি না, সবসময় দলের মুখ চেয়ে কথা বলতে হবে। যে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে আমাকে তাদের কথা ভাবতে হবে। ব্যারাকপুরের প্রধান শিল্প জুটমিল। সেটা ধ্বংস হয়ে যাবে, আর আমি বসে বসে দেখব! এটা কি হতে পারে?”

সে তো হল, কিন্তু কাদের নিয়ে আন্দোলন করবেন আপনি? ব্যারাকপুর লোকসভার সাতটির মধ্যে ছয়টি বিধানসভা তৃণমূলের দখলে। আপনার ছায়া প্রচ্ছায়া, বেশিরভাগই তৃণমূলে।
উত্তরে ব্যারাকপুরের সাংসদ বলেছেন, “বিধানসভার ফলাফলের দায় আমার নয়। যাঁরা প্রার্থী ঠিক করেছিলেন তাঁদের”।

আপনি সাংসদ। আপনার মতামত ছাড়াই প্রার্থী ঠিক করা হয়েছিল?
এ প্রশ্নের জবাবে সরাসরিই বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন অর্জুন। বলেছেন, “তাহলে আর বলছি কী! এমন সব লোককে প্রার্থী করেছিল, যাঁদের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে কেউ হারে”?

প্রার্থী কারা ঠিক করেছিল?
“নেতারা। নেতা, প্রার্থী এসব উপর থেকে চাপিয়ে দিলে চলে না”।

দুশো’র জায়গায় ৭৭- এ থেকে যাওয়ার কারণ তবে ভুল প্রার্থী বাছাই?
অর্জুনের স্পষ্ট উত্তর, “আসল কারণ সংগঠন নেই। বাংলায় বুথ স্তরে সংগঠন না থাকলে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখা বৃথা”।

বাংলায় বিজেপির সংগঠন এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে?
কটাক্ষের সুরে অর্জুনের জবাব, “ফেসবুকে আছে, বুথে নেই। একটা দৃষ্টান্ত দিচ্ছি, তাহলেই আপনি বুঝে যাবেন সংগঠনের কী হাল। আসানসোলের উপনির্বাচনে আমাকে দু’দিনের জন্য পাঠানো হল প্রচারে। আমি ফিরে এসে দলকে বললাম, কোনও চান্স নেই। ওখানে কোনও সংগঠন নেই। পরে শুনলাম, ৯০০ বুথে এজেন্টই দিতে পারেনি পার্টি। আসলে রাজনীতি আর ভোট, দুটো এক নয়। বিশেষ করে বাংলায় বুথ স্তরে সংগঠন না থাকলে কিচ্ছু হবে না। তবে, আবারও বলছি, বিজেপির বুথে সংগঠন না থাকলেও ফেসবুকে অবশ্যই আছে”।খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২

news