দিল্লির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে উচ্ছেদ অভিযানকে ব্যবহার করা হচ্ছে’

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে উচ্ছেদ অভিযানকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ৩০টির বেশি নারী ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে তারা গতকাল (বুধবার) দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং পাঁচটি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়রকে চিঠি দিয়েছেন।

তারা বলেছেন, অবিলম্বে দিল্লিতে বেআইনি উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে হবে। গরীব বাসিন্দাদের জীবিকার উপর আঘাত হানা চলবে না। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাদের জীবিকা অবিলম্বে চালু করাতে হবে। যাতে তারা আতঙ্কের পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। দিল্লির ‘মুসলিম বাসিন্দা’দের কাছে পৌঁছাতে হবে। এবং তাদের আশ্বস্ত করতে হবে অন্য যে কোনো ধর্মের লোকের মতই তারাও এই শহরের বাসিন্দা। আইন এবং সংবিধান দ্বারা তারা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।  

আজ (বৃহস্পতিবার) সিপিআইএমের মুখপত্র ‘গণশক্তি’তে প্রকাশ, বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ তাদের চিঠিতে লিখেছেন, প্রথমে রাজনৈতিক নেতারা এবং গণমাধ্যমের একাংশ নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এই উচ্ছেদকে ঘিরে। তারপরে সেই উচ্ছেদ এবং ধ্বংস কার্যকর করা হচ্ছে। উচ্ছেদের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেগুলো শুধুমাত্র দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। এরমধ্যে শাহীনবাগ, ওখলা, সরিতা বিহার, জৈতপুর, জাসোলা এবং মদনপুর খাদের প্রমূখ জায়গা রয়েছে। এমনকী জাহাঙ্গিরপুরীতেও বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক প্রচারে দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে জাহাঙ্গিরপুরী কোনো বেআইনি বা অননুমোদিত কলোনি নয়, যেভাবে গণমাধ্যমের একাংশ প্রচার করছে। জাহাঙ্গিরপুরী একটি পুনর্বাসন কলোনি যা সরকার নিজেই তৈরি করেছিল। যেসব জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চলছে এবং ধ্বংসলীলা সংগঠিত হচ্ছে, সেখানকার বাসিন্দাদের কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই ‘রোহিঙ্গা’, ‘বাংলাদেশি’ এবং ‘দাঙ্গাকারী’ বলে দেওয়া হচ্ছে। মিথ্যা তথ্য, ধোপে টেকে না এমন যুক্তি এবং বিষাক্ত প্রচার চালিয়ে জোর করে ওইসব কলোনির বাসিন্দাদের ঘাড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওইসব এলাকার বাসিন্দারা দাঙ্গা করেছে- প্রথমে এইরকম একটা ভাষ্য তৈরি করা হচ্ছে, তারপর সেই ভাষ্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় উচ্ছেদ এবং ধ্বংসের কাজ চালানোর কাজে। দেশজুড়ে এই বেআইনি উচ্ছেদের ঘটনাকে তারপর উপস্থিত করা হচ্ছে ‘শাস্তি’ হিসেবে। বিজেপি’র দিল্লির সভাপতি আদেশ গুপ্তা এই শব্দই ব্যবহার করেছেন।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিজেপি নেতা ধ্বংস এবং উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জন্য দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের উপরে চাপ তৈরি করেছেন। এমনকী সুপ্রিম কোর্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলার পরেও ওই কাজ করেছেন তিনি। 

নারী সংগঠনগুলো দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর, মুখ্যমন্ত্রী এবং মেয়রদের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, রাস্তার গরিব দোকানদার, তারা হিন্দু হোন বা মুসলিম, উচ্ছেদ করার কী এমন জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়ল, যখন তারা রেকর্ড বেরোজগারি, মূল্যবদ্ধি ও মহামারী এবং লকডাউনের জেরে দু’বছর পরে অর্থনৈতিক বিধ্বস্ততার মধ্যে আছে?  

মহিলা নেত্রী মালিনী ভট্টাচার্য, মারিয়ম ধাওয়ালে, অ্যানি রাজা, দীপ্তি ভারতী, কবিতা কৃষ্ণাণ, পুনম কৌশিক, বানী সুব্রহ্মণ্যম, অনুরাধা ব্যানার্জি, শবনম হাসমি, জয়তী ঘোষ, মাইমোনা মোল্লা, মালা, অমৃতা জোহরি, অঞ্জলি ভরদ্বাজ, অবন্তীকা তিওয়ারি, আয়েশা কিদওয়াই, ললিতা রামদাস, মমতা কারোলিল, নন্দিনী রাও, নাতাশা নারওয়াল, নবশরণ সিং, নিকিতা আগরওয়াল, নিবেদিতা মেনন, নূর ইনায়ত, পায়োলি স্বতিজা, শাকিল, শিপ্রা নিগম, স্মিতা গুপ্তা, স্মিতা ভি, সুনালিনী কুমার, উমা চক্রবর্তীরা ওই চিঠি লিখেছেন।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news