মুসলিমদের দূরে ঠেলে খ্রিস্টানদের বুকে টানার চেষ্টা, বিজেপির বিভাজন রাজনীতির নয়া পরীক্ষাগার

 লাভ জিহাদের কথা হামেশাই শোনা যায় বিজেপি (BJP) সহ সঙ্ঘ পরিবারের লোকজনের মুখে। হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুসলিম ছেলেরা বিয়ে করে ধর্মান্তরিত করেছে, অভিযোগ তাদের।
কেরলের কোঝিকোড়ের একটি সভায় শুক্রবার যথারীতি লাভ জিহাদ নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গলা চড়ান বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা (JP Nadda)। তবে, তাৎপর্যপূর্ণ হল, শুধু হিন্দু নয়, দক্ষিণের ওই রাজ্যে বিজেপি (BJP) সভাপতি এই ব্যাপারে খ্রিস্টানদেরও মন ছোঁয়ার চেষ্টা করেন। বলেন, লাভ জিহাদ, নারকোটিক জিহাদ নিয়ে খ্রিস্টানরাও সমান চিন্তিত।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির এমন খ্রিস্টান দরদ নিয়ে বাম শাসিত কেরলে (Kerala) রাজনীতির আলোচনা নয়া মাত্রা পেয়েছে।
নাড্ডা অবশ্য একেবারে নতুন কথা বলেছেন তা নয়। কেরলের মুসলিমদের একাংশ ধর্মীয় আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্যে হিন্দু ও খ্রিস্টান যুবক-যুবতীদের মাদকাসক্ত করে তুলছে বলে বিগত কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে গলা মিলিয়েছে কেরলের একাধিক চার্চের প্রধান এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একাংশ। ঘটনা, বাম শিবিরের একাংশও এই অভিযোগে গলা মেলাচ্ছে।
নারকোটিক জিহাদ নিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম সরব হন ক্যাথলিক বিশপ জোসেফ কল্লরঙ্গত। তাঁর অভিযোগ, মুসলিমরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিস্টান যুবাদের মাদকাসক্ত করে তুলছে।
অন্যদিকে, গতমাসে কান্নুরে সিপিএমের এক মুসলিম ও খ্রিস্টান কমরেডের বিয়েকে কেন্দ্র করে লাভ জিহাদের অভিযোগ তুলে পার্টির একাংশ সরব হয়। কান্নুর পার্টির জেলা কমিটির এক সদস্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে লাভ জিহাদের অভিযোগ তুলে মুসলিম কমরেড তরুণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলেন। গলা মেলায় স্থানীয় খ্রিস্টানদের একাংশ। তাদের অভিযোগ ক্ষমতাসীন সিপিএম এবং বিরোধী কংগ্রেস ভোটের স্বার্থে মুসলিমদের মাথায় তুলছে। আবার মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ভাষণের অভিযোগে এক প্রবীণ প্রাক্তন কংগ্রেস নেতার গ্রেফতারি ঘিরেও রাজনীতিতে শোরগোল পড়েছে। ওই কংগ্রেস নেতার জামিনের দাবিতে মুখর হয় বিজেপি।
এমন অনুকূল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই নাড্ডার জনসভার আয়োজন করেছিল কেরল বিজেপি। কোঝিকড়ের সভায় তিনি খুল্লামখুল্লা অভিযোগ করেন, রাজ্যের সিপিএম সরকার ইসলামিক জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে। সেই সঙ্গে একাধিকবার রাজ্যের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মনে মলম দিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লাভ জিহাদ ও নারকোটিক জিহাদের কথা বলেন।
লক্ষ্যনীয় হল, রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চের মতো খ্রিস্টানদের জন্য কেরলে বিজেপি অ্যাসোসিয়েশন অফ খ্রিস্টান ট্রাস্ট সার্ভিসেস নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছে। সংগঠনের মাথায় রয়েছেন কেরল বিজেপির সভাপতি সিপি রাধাকৃষ্ণন।
সম্প্রতি ওই সংগঠনের বৈঠকে কেরলের বহু চার্চের প্রধান উপস্থিত হন। বৈঠকে তাঁরা একদিকে যেমন লাভ জিহাদ, নারকোটিক জিহাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন, অন্যদিকে, বিদেশি অনুদান নিয়ে সরকারি নিয়মকানুন শিথিল করার দাবি তোলেন।
বিজেপি নেতারা কথা দেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে বলে এই দাবি আদায় করে দেওয়া হবে। বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে মাথায় রেখে তৈরি সংগঠনের সভায় দলে দলে খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের উপস্থিতি কেরলের। রাজনীতিতে নয়া মাত্রা যোগ করেছে। সিপিএম এবং কংগ্রেস দুই শিবিরই চিন্তিত।
বিজেপির রাজনীতিটা কী? (BJP)
খ্রিষ্টান মিশনারিদের পাশাপাশি কেরলে দীর্ঘদিন যাবৎ আরএসএস বেশ শক্তিশালী। কিন্তু বিজেপি সেই তুলনায় ক্ষুদ্র শক্তি। তার প্রধান কারণ রাজ্যের ২৬ শতাংশ মুসলিম ও ১৮ শতাংশ খ্রিস্টানের সিংহভাগ সিপিএম ও কংগ্রেস, এই দুই শিবিরে বিভক্ত। এই দুই ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সমর্থনের উপর নির্ভর করে ঠিক হয় ক্ষমতায় থাকবে কোন দল। স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস ও বাম এই দুই শিবির ক্ষমতায় আসছে দক্ষিণের ওই রাজ্যে। 

বিজেপির কৌশল হল, সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ককে মুসলিম ও অ-মুসলিম শিবিরে ভেঙে দেওয়া। খ্রিস্টানদের কাছে টানার চেষ্টা সেই কারণেই। গেরুয়া শিবিরের আশা, খ্রিস্টান ভোটের একাংশ নিজেদের দিকে আনতে পারলে হিন্দু ভোটের কল্যাণে সিপিএম ও কংগ্রেসকে মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই যতভাবে সম্ভব, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি গেরুয়া শিবিরের নয়া কৌশল। এই কৌশলের পরীক্ষানিরীক্ষার ল্যাবরেটরি করা হয়েছে বাম শাসিত কেরলকে। যেখানে শাসক ও প্রধান বিরোধী পক্ষ, দুই দলই ধর্মনিরপেক্ষ।খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news