ইবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতন প্রথম নয়, ভয়ে মুখ খোলে না কেউ
গত রোববার ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে শেখ হাসিনা হলে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয় শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থীকে মারধরসহ বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। এ বিষয়টি অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছে ওই ছাত্রলীগ নেত্রী। তবে ক্ষমতাসীন দলের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে বেপোরোয়া চলাফেরা এবারই প্রথম নয়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে হলে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে অন্তরা ও তার অনুসারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানায়, শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে নাম আসার পর থেকেই পরিসংখ্যান বিভাগের এই শিক্ষার্থী হলে নৈরাজ্য চালাতে থাকে। হলের গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে চালাতেন মানসিক নির্যাতন।
হল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই অন্তরার চেচামেচির আওয়াজ পেতেন হলে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। তবে ঘটনা গুলোকে অনেকে সহ্য করে নিয়ে চুপচাপ থাকতেন। অনেকে নির্যাতিত হওয়ার পর অপমান ও লজ্জার ভয়ে জিনিসগুলোকে পাশ কাটিয়ে যেতেন। কথায় কথায় নিজেকে সাদ্দাম হুসাইনের বান্ধবি পরিচয় দিতেন অভিযুক্ত অন্তরা। এছাড়া, নির্যাতনের কথা বাইরে বললে ছাত্রলীগের ছেলেকর্মীর সহয়তায় ক্ষতি করানোরো হুমকি ধামকি দিতেন ছাত্রলীগের এ নেত্রী। প্রতিবাদ করলেই শিবির আখ্যা দেওয়ারও একটি প্রচলন রয়েছে দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে।
শুধু শেখ হাসিনা হল নয়, ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে হলের শিক্ষকদেরও রোষানলে পড়তে হয় তাদের। কয়েক মাস আগে বেগম খালেদা জিয়া হলের এক শিক্ষার্থীকে ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী পরিচয় দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবা সিদ্দিকা।
শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি মোদাচ্ছির খালেক ধ্রুবর এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ৩১ জুলাইয়ের নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া অনেকেই ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রাম না করেই দলে পদ পেয়েছেন। আর এদের কারণেই দলের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে দলকে এরা বিপদগ্রস্থ করবে।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের র্যাগিং এ বিশ্বাসী না। কেন্দ্র থেকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। তারপরও যদি কেউ দলের নাম ভাঙিয়ে এরকম আচরণ করে তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই দলের বিধান অনু্যায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরার ব্যাপারে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা তদন্ত কমিটি স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সকলের কাছ থেকে ইতোমধ্যে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছে। আশা করছি এখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিখুঁতভাবে কেন্দ্রে পাঠাতে পারবো।
যেহেতু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারছে না। তাই তিনি শাখা ছাত্রলীগের মিছিল মিটিং এ অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা অব্যাহতি দিতে পারি না। কেউ দোষী হলে তার শাস্তির জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করতে পারি।
এনবিএস/ওডে/সি


