বিশ্বজুড়ে হানি ট্র্যাপের শিকার হয়ে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি মান-সম্মান, সম্পদ ও ক্ষমতা হারাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মন্ত্রী কে এন রাজান্না চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন—ভারতের প্রায় ৪৮ জন রাজনীতিবিদ, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাও রয়েছেন, হানি ট্র্যাপে পড়েছেন।
ভারতে হানি ট্র্যাপের বিস্তার
গত মঙ্গলবার বিধানসভায় দেওয়া ভাষণে কে এন রাজান্না দাবি করেন, দীর্ঘ ছয় মাস ধরে একটি সংগঠিত চক্র রাজনীতিবিদদের ফাঁদে ফেলতে সক্রিয় রয়েছে। তার ছেলে, আইনসভার সদস্য রাজেন্দ্র, জানান যে তারা দুই মাস ধরে এই সিন্ডিকেটকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করছেন।
রাজেন্দ্র বলেন, "তারা প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে কল বা মেসেজ পাঠায়। এরপর ধীরে ধীরে টার্গেটকে ফাঁদে ফেলে। তদন্ত শেষ হলে আমরা পুরো ঘটনা জানতে পারব।"
গণপূর্তমন্ত্রী সতীশ জারকিহোলিও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, "এটি নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি বিনিয়োগের একধরনের পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক মন্ত্রীকে দুবার এই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি।"
হানি ট্র্যাপ কী এবং কেন এটি ভয়ংকর?
হানি ট্র্যাপ একটি কৌশল যেখানে যৌনতার প্রলোভন দেখিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করা হয়। মূলত রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কাছ থেকে গোপন তথ্য সংগ্রহ করাই এর উদ্দেশ্য।
এই শব্দটি প্রথম জনপ্রিয় হয় ব্রিটিশ-আইরিশ লেখক জন লে ক্যারের ১৯৭৪ সালের উপন্যাস ‘টিঙ্কার, টেইলর, সোলজার, স্পাই’-এর মাধ্যমে। তবে বাস্তবে, এটি শুধু কল্পকাহিনি নয়; বাস্তব রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা জগতে হানি ট্র্যাপ বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে।
ভারতে তদন্তের দাবি জোরালো হচ্ছে
কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরা জানিয়েছেন, "আমি এ বিষয়ে অবগত নই, তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তথ্য চাইব।"
বিশ্লেষকদের মতে, হানি ট্র্যাপ এখন শুধু ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের হুমকি। এই ধরনের ষড়যন্ত্র রাজনৈতিক পরিবেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্যও বিপজ্জনক।


