বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-তে অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছে কানাডা! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কানাডা থেকে আমদানিকৃত গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশে ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় এই বিরোধের সূত্রপাত। গত ৩ এপ্রিল এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার দিনেই কানাডা আনুষ্ঠানিকভাবে ডব্লিউটিও'র কাছে অভিযোগ দাখিল করে, যা আজ সকল সদস্য দেশের কাছে পৌঁছেছে।

কানাডার দাবি, ১৯৯৪ সালের General Agreement on Tariffs and Trade (GATT)-এর বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে এই শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একে "আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ" বলে উল্লেখ করেছে কানাডা।

কানাডার জবাবি আঘাত: মার্কিন গাড়িতেও ২৫% শুল্ক!

মার্কিন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে কানাডা। তারা ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত হাজার হাজার গাড়ির উপরও ২৫% শুল্ক আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তর আমেরিকার দুই প্রতিবেশীর বাণিজ্য সম্পর্ক।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এই শুল্ককে "কানাডার শ্রমিকদের উপর সরাসরি আক্রমণ" বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি দৃঢ় ভাষায় বলেন, "আমরা আমাদের শ্রমিকদের রক্ষা করব, আমাদের কোম্পানিগুলোকে রক্ষা করব, আমাদের দেশকে রক্ষা করব—এবং আমরা একসাথে এটা করব!"

কেন এই শুল্ক যুদ্ধ?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের "আমেরিকা ফার্স্ট" নীতির অংশ হিসেবে গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এবার কানাডাও তার টার্গেটে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ:

  • গাড়ি শিল্পের গভীর সম্পর্ক: কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্প পরস্পর নির্ভরশীল। অনেক গাড়ির যন্ত্রাংশ এক দেশে তৈরি হয়, অন্যদেশে এসে তা অ্যাসেম্বল হয়।

  • ভোক্তাদের উপর চাপ: শুল্ক বাড়লে গাড়ির দাম বাড়বে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বাড়তি বোঝা।

  • শেয়ারবাজারে প্রভাব: এই সংঘাতের কারণে অটোমোবাইল সেক্টরের শেয়ারগুলিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

ডব্লিউটিও'র ভূমিকা কী?

ডব্লিউটিও'র dispute consultation প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপ হলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা। যদি এতে কোনো ফল না হয়, তাহলে প্যানেল গঠন করা হবে এবং রায় দেওয়া হবে। তবে এই প্রক্রিয়া কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে।

মজার বিষয় হলো, ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই ডব্লিউটিও'র সমালোচনা করে বলেছে, সংস্থাটি মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে রায় দেয়। তাই এই বিরোধ কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে।

কানাডার পরবর্তী পদক্ষেপ

কানাডা ইতিমধ্যেই তাদের পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেছে, কিন্তু তারা আইনি লড়াইও চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। কানাডার বাণিজ্য মন্ত্রী বলেছেন, "আমরা আইনের শাসন মেনে চলি, এবং আমরা আশা করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তা করবে।"

 

এই শুল্ক যুদ্ধ শুধু কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই—এটি গোটা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি সংকেত। যদি এই ধারা চলতে থাকে, তাহলে অন্যান্য দেশও একে অপরের বিরুদ্ধে শুল্ক বাড়াতে পারে, যা বৈশ্বিক মন্দার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 

#কানাডা #মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র #শুল্কযুদ্ধ #গাড়িশিল্প #ডব্লিউটিও #বাণিজ্যযুদ্ধ

news