গতকাল ভোরে ইয়েমেনের রাস ইসা তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হুথি বিদ্রোহী গ্রুপ। হুথি-নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ স্যাটেলাইট টিভিতে হামলার পরের ভয়াবহ দৃশ্য দেখানো হয়েছে—যেখানে বিস্ফোরণ ও আগুনের মধ্যে পড়ে থাকা লাশগুলো দেখা গেছে। হুথিদের বক্তব্য, নিহতদের মধ্যে প্যারামেডিক ও বেসামরিক কর্মীরাও রয়েছেন।

মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড হামলাটি নিশ্চিত করে বলেছে, "এই হামলা ইরান-সমর্থিত হুথি সন্ত্রাসীদের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ ও অবৈধ আয় থেকে বঞ্চিত করার জন্য করা হয়েছে, যা গত ১০ বছর ধরে পুরো অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।" তবে তাদের বিবৃতিতে হতাহতের কোনো উল্লেখ নেই। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রশ্নের জবাবেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

রাস ইসা বন্দর ইয়েমেনের হোদাইদা গভর্নরেতে অবস্থিত, যা লোহিত সাগরের তীরে কামারান দ্বীপের কাছে অবস্থিত। নাসার স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, হামলার পর সেখানে ভয়াবহ আগুন জ্বলছে। এই বন্দরটি ইয়েমেনের তেলসমৃদ্ধ মারিব গভর্নরেতে পর্যন্ত বিস্তৃত একটি পাইপলাইনের শেষ প্রান্ত। দশ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে ইয়েমেন থেকে তেল রপ্তানি বন্ধ রয়েছে, এবং হুথিরা রাস ইসা বন্দর ব্যবহার করে তেল আমদানি করছে।

হুথি বিদ্রোহীরা এই হামলাকে "ইয়েমেনের সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন" বলে নিন্দা জানিয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা সাবার মাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "এটি একটি বেসামরিক স্থাপনার ওপর সরাসরি হামলা, যা দশক ধরে ইয়েমেনের মানুষের সেবা করে আসছে।"

গত ৯ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইয়েমেনে তেল সরবরাহ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছিল, "হুথিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দরে তেল সরবরাহ করলে বা জাহাজ খালাস করলে সংশ্লিষ্ট দেশ বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য প্রবেশে বাধা দেওয়ার প্রতিশোধ হিসাবে হুথিরা সম্প্রতি ইসরায়েলি জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই মার্কিন হামলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত হুথিরা ১০০টিরও বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল, যার মধ্যে দুটি জাহাজ ডুবে যায় এবং চার নাবিক নিহত হয়। তারা আমেরিকান যুদ্ধজাহাজেও হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল, তবে সফল হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসন এই হামলাকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টার সঙ্গেও যুক্ত করেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইয়েমেনে মার্কিন হামলার তীব্রতা বেড়েছে, এবং এটি এখন শুধু লঞ্চ সাইট নয়—হুথি নেতৃত্ব ও শহুরে লক্ষ্যগুলোকেও আঘাত করছে।

#ইয়েমেন #মার্কিন_হামলা #হুথি_বিদ্রোহী #লোহিত_সাগর #মধ্যপ্রাচ্য_সংকট

news