ভারতে মুসলিমদের সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল জমিয়তে উলামা হিন্দ
সোমবার হিন্দি গণমাধ্যম ‘জনসত্তা’ সূত্রে প্রকাশ, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ রাজ্যে সহিংসতা এবং অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িত ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তিদের সম্পত্তিতে বুলডোজার চালানোর বিরুদ্ধে ওই আবেদন দায়ের করা হয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ বলেছে, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে মুসলিমদের সম্পত্তির ওপর বুলডোজার চালানো হচ্ছে। পারসটুডে
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ আদালতে দেওয়া আবেদনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বুলডোজার চালানো বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছে। তারা ফৌজদারি মামলায় জড়িত মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলাকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছে।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ বলেছে, আদালতের নির্দেশের পরেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের কোনো স্থায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিতে আদালতকে নির্দেশনা দিতে হবে। আদালতের কাছে সংগঠনটি দাবি জানিয়েছে যে, শাস্তি হিসেবে একটি আবাসিক বাড়ি ভেঙে দেওয়া যায় না।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের সম্পত্তির উপর বুলডোজার চালানোর বিরুদ্ধে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। আজ শুধু সংখ্যালঘুরাই নয়, দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রও হুমকির মুখে।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা পিটিশনের বিষয়ে জমিয়ত নেতা মাওলানা মাদানী বলেন, সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে মুসলিমদের ধ্বংস করার জন্য বুলডোজারের বিপজ্জনক রাজনীতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ।
সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠিও লিখেছিল জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। এতে অমিত শাহকে মুসলিমদের বাড়িঘর ও অন্যান্য সম্পত্তির ওপর বুলডোজার চালানোর বিষয়টি উদ্বেগের বিষয় বলে জানিয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়েছে, মুসলিমদের সম্পত্তিগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে বেশ কিছুদিন ধরেই অপরাধী সন্দেহে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বুলডোজার চালানোর অভিযান চলছে। একইসঙ্গে বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশেও বুলডোজারের মাধ্যমে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি রামনবমী উপলক্ষে মধ্য প্রদেশের খারগোন জেলায় বের হওয়া মিছিলে পাথর নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরপর অভিযুক্তদের বাড়িঘর ও দোকানপাট গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, মধ্য প্রদেশের বিজেপি সরকার ‘বেআইনি’ তকমা দিয়ে খারগোন সহ বেশ কিছু এলাকায় বেছে বেছে মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকান বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এর বিরোধিতা করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন বেশ কিছু আক্রান্ত মুসলিম পরিবারের সদস্যরা। ভোপাল শহর কাজী সৈয়েদ মুশতাক আলী নাদভি সংবাদসংস্থাকে বলেন, ‘সমাজ আইন দ্বারা পরিচালিত। কোনও একজন যদি অপরাধ করে, তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। গোটা বাড়ি ভেঙে দেওয়া হবে কেন? পরিবারের একজন সদস্যের অপরাধের জন্য বাকিরা ঘরছাড়া হয়ে রাস্তায় থাকবেন কেন? আমরা নিশ্চিতভাবেই আদালতের দ্বারস্থ হবো।’
‘দৈনিক ভাস্কর’ জানিয়েছে, ভোপাল শহর কাজী সৈয়েদ মুশতাক আলী নাদভি বলেন, ‘খারগোনের দাঙ্গায় নিরপরাধদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। নিরপরাধদের শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। ঘর ভাঙার মতো কাজ অন্যায়। কারফিউ ওঠার পর আমরা জানতে পারব কত নিরপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরপরাধদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, তাদের সাহায্য করুন। আগে প্রমাণ করতে হবে কে পাথর ছুড়েছে। ঢিল নিক্ষেপকারী অন্য মানুষও হতে পারে। দাঙ্গায় কারা জড়িত? এর তদন্ত হওয়া উচিত’ বলেও ভোপাল শহর কাজী সৈয়েদ মুশতাক আলী নাদভি মন্তব্য করেন। শহর কাজী প্রশ্ন তোলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় একই সঙ্গে কেন দাঙ্গা হচ্ছে? এটা কী ষড়যন্ত্র নয়?
সিপিএমের মুখপত্র ‘গণশক্তি’তে প্রকাশ, রামনবমীর দিন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে মিছিল নিয়ে গিয়ে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে দাঙ্গা বাধায়। তারপর বিজেপি প্রশাসন ‘আক্রান্তদের’ বাড়ি, দোকানের উপর দিয়েই বুলডোজার চালাতে শুরু করে। নির্দিষ্ট যে সমস্ত এলাকায় দাঙ্গা বেধেছে, সেখানে ঢুকে ‘বেআইনি’ বলে মুসলিমদের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্যারেজে। মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এসব ‘বেআইনি’ বাড়ি ভাঙার পক্ষে মত দিয়েছেন। একইসঙ্গে ‘দাঙ্গায় ইন্ধন জোগানো কাউকেই তার সরকার বরদাশত করবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। শুধু মধ্য প্রদেশেই নয়, আরেক বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাটেও একই কাজ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা আফতাব আহমেদ জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন গত শুক্রবার। দেশজুড়ে মুসলিম বিরোধী হিংসাত্মক ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বলেও কমিশনকে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা আফতাব আহমেদ।