চীনে এক সময় এক সন্তান নীতির কারণে অতিরিক্ত সন্তান নেওয়ার জন্য পরিবারগুলোকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতো। এখন সেই জরিমানার জায়গায় এসেছে ভর্তুকি, তবুও তরুণ প্রজন্ম সন্তান নিতে আগ্রহী নয়।
চীনের পূর্বাঞ্চলের ছোট শহরে বড় হওয়া লি জানান, তার ছোট বোন জন্মানোর পর তাদের পরিবারকে প্রায় ১ লাখ ইউয়ান জরিমানা দিতে হয়েছিল। এটাই ছিল পরিবারের বার্ষিক আয়ের তিন গুণ বেশি।
লি বলেন, সেই অভিজ্ঞতার পর তিনি নিজে কখনো সন্তান নেওয়ার কথা ভাবেননি। এখন ২৫ বছর বয়সে তিনি স্পষ্ট জানান, সন্তান নেওয়ার কোনো পরিকল্পনাই নেই তার।
চীন সরকার বর্তমানে জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলায় সন্তান নেওয়ায় উৎসাহ দিতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিন বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি সন্তানের জন্য বছরে ৩,৬০০ ইউয়ান করে ভর্তুকি দেবে সরকার।
তবে অনেক তরুণ মনে করছেন, এই ভর্তুকি যথেষ্ট নয়। চীনে একটি শিশুকে বড় করতে গড়ে খরচ পড়ে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ইউয়ানেরও বেশি, যা মাথাপিছু জিডিপির ছয় গুণের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভর্তুকি প্রণোদনার ফলে জন্মহারে তেমন প্রভাব পড়ছে না। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও একই ধরনের প্রণোদনা ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
চীনের বর্তমান আর্থিক অবস্থাও তরুণদের সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা আরও দুর্বল করে তুলছে। উচ্চ বেকারত্ব, বাসস্থানের উচ্চমূল্য এবং কর্মক্ষেত্রের অনিশ্চয়তা তাদের হতাশ করছে।
তরুণদের অনেকেই মনে করেন, সন্তান বড় করার পরিবেশ এখন অনুপযুক্ত। বেইজিংয়ের এক বাসিন্দা বলেন, “আমি চাই না আমার সন্তান আমার মতো সংগ্রামে বড় হোক।”
নারীরা সন্তান জন্ম ও লালন-পালনের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ চাপের মুখে থাকেন। কর্মক্ষেত্রে চাপ, সামাজিক প্রত্যাশা এবং গৃহস্থালির কাজ মিলিয়ে তারা দ্বিধায় পড়েন পরিবার শুরু করার সিদ্ধান্তে।
চীনা সরকারের প্রণোদনার উদ্যোগ জন্মহারে দ্রুত পরিবর্তন আনছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমতা, কর্মসংস্থান নিরাপত্তা এবং পরিবারবান্ধব নীতির অভাব থাকলে শুধু অর্থসাহায্য দিয়ে জনসংখ্যা সংকট ঠেকানো সম্ভব নয়।
