রানির মৃত্যুতে ভাঙনের মুখে গ্রেট ব্রিটেন! স্কটল্যান্ডে জোরাল হচ্ছে স্বাধীনতার দাবি

 ‘দ্য এমপায়ার অন হুইচ সান নেভার সেটস’। সহজ বাংলায়, ‘যে সাম্রাজ্যে সূর্য কখনও অস্ত যায় না’। একসময় গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কে এমনটাই বলা হত। কিন্তু আজ পরিস্থিতি পালটেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা, ঠান্ডা লড়াই ও আমেরিকার উত্থানে দাপুটে ব্রিটিশরা অনেকটাই কুঁকড়ে গিয়েছে। তার উপর রানি এলিজাবেথের মৃত্যুতে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে ব্রিটেন। এবার স্কটল্যান্ডে জোরাল হচ্ছে স্বাধীনতার দাবি।

সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, রানির (Elizabeth II) মৃত্যুর পর থেকেই স্কটল্যান্ডে জোরাল হচ্ছে স্বাধীনতার দাবি। ‘ইউনাইটেড কিংডম’ তথা গ্রেট ব্রিটেন থেকে আলাদা হয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে স্কটল্যান্ডের জনগণের একাংশ। গত বৃহস্পতিবার রানিকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে স্কটল্যান্ডের বালমোরল প্রাসাদে গিয়েছিলেন ৬৭ বছরের আর্চি নিকোল। এএফপি-কে তিনি বলেন, “ব্রিটেনকে একসুতোয় বেঁধে রেখেছিলেন রানি (এলিজাবেথ দ্বিতীয়)।” নিকোলা সান্ডিল্যান্ড নামের বছর সাতচল্লিশের শিক্ষিকা বলেন, “এটা খুবই স্পষ্ট যে স্কটল্যান্ডকে অত্যন্ত সম্মান করতেন রানি। রাজপরিবারও স্কটিশ। তবে আমি মনে করি রানির মৃত্যুতে হয়তো স্কটল্যান্ডের প্রজাতন্ত্র হওয়ার পথ আর সুগম হয়েছে।” স্কটিশ সাংবাদিক ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় লিখেছেন, “এই ঘটনাকে (রানির মৃত্যু) এক যুগের অন্ত হিসেবে দেখছেন স্কটদের একাংশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নতুন দিশার সন্ধান করবেন তাঁরা।”

বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ব্রিটেনের মসনদে চার্লস বসায় পরিস্থিতি কিছুটা ঘোরাল হয়ে উঠেছে। প্রজাতন্ত্র ঘোষণার দাবিতে গণভোটের দাবি উঠতে পারে স্কটল্যান্ডে। তবে রাজা চার্লস স্কটিশ বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। দেশটির জাতীয় পোশাক পরতে ভালবাসেন তিনি। স্কটল্যান্ডের প্রভাবশালী অনেকেই তাঁর বন্ধু এবং অনুগত। কিন্তু এতকিছুর পরও এলিজাবেথের ব্যক্তিত্বের সামনে তিনি খানিকটা ফিকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেল’-এ বর্ষীয়ান সাংবাদিক অ্যান্ড্রু নেল লিখেছেন, “তিনি (রানি) নেই, তাই এই জোট এখন অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীন। রানির মতো স্কটল্যান্ডকে ভালবাসেন রাজা চার্লস (King Charles)। কিন্তু বাস্তবে তাঁর তেমন কর্তৃত্ব নেই।” এক ব্রিটিশ বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, রাজতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন রয়েছে ৪৫ শতাংশ স্কটিশ জনতার। অন্যদিকে, প্রজাতন্ত্র চাইছেন ৩৬ শতাংশ। ‘ইউনাইটেড কিংডম’-এর অঙ্গরাজ্য হয়ে থাকতে চাইছেন ৫১ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট হয় স্কটল্যান্ডে। সেবার জয় হয়েছিল রাজতন্ত্রের সমর্থকদের। রানির মৃত্যুতে এবার স্বাধীনতার দাবিতে ফের সরব হয়েছে জাতীয়তাবাদী ‘স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি’। তবে তারা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে নয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাজা চার্লসসের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা আলেক্স সামন্ড। রানির মৃত্যুতে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন শোকপ্রকাশ করেছেন। সবমিলিয়ে, রাজা চার্লসের সফর যে খুব মসৃণ হবে না তা স্পষ্ট।
সংবাদ প্রতিদিন /এনবিএস/২০২২/একে

news