বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সরকার দেশের সংবিধান, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ইসলামী বিধানকে অগ্রাহ্য করে দেশে মদের লাইসেন্স প্রদান করে দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
মাদকদ্রব্য মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। মাদকতা বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশ মাদক সমস্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংগঠনের মতে, সম্প্রতি দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। কর্মহীন যুবকের প্রায় ৪০ শতাংশ মাদক সেবী, আর মাদক সেবীর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ২৩৯ পিছ ইয়াবা জব্দ করা হয়। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিদিন ২ মিলিয়ন ইয়াবা বিক্রি হয় বাংলাদেশে। গত ১২ বছরে এর বিস্তার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন সংস্থা অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। বর্তমানে সারাদেশে মাদক সেবনকারীরা প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি টাকার নেশা গ্রহণ করছে। বছরের হিসেবে এর পিছনে খরচ হয় আনুমানিক ৭ হাজার ৩ শত কোটি টাকা। এ ব্যবসায় জড়িত ২০০ গডফাদার ও বিক্রির নেটওয়ার্কে কাজ করে ১ লাখ ৬৫ হাজার জন। প্রতি বছরই বাড়ছে এ সংখ্যা।
মাদকদ্রব্য লেনদেনের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে। নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিস্তারের এই সর্বনাশা চিত্র যেভাবে আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি করছে সেভাবে একটি প্রজন্মের চিন্তার জগতে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করছে। দীর্ঘ মেয়াদে এর ফল ভয়াবহ হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে ২১ বছরের উপর যে কোনো ব্যক্তিকে মদ্যপানের জন্য পারমিট প্রদান করার বিধান রেখে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এ আইন অনুযায়ী কোনো এলাকায় ১০০ জন মদ পানকারী থাকলে ঐ এলাকায় মদ বিক্রির লাইসেন্স দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের নৈতিক মান, ঈমানী চেতনা ধ্বংস করে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত দেশ এবং জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। এদেশের মানুষ আল্লাহকে ভয় করে। মদসহ সকল ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। এ সরকার দেশের সংবিধান ও মানুষের ধর্মীয় বিধানকে লংঘন করে মদের লাইসেন্স প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। জনগণ এ সিদ্ধান্ত মানে না। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভা সংগঠনের আমীর ডাঃ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।