সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর তিন মাস পরে ঢাকায় একটি কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি নিজেদের ফেসবুক পোস্টে নেতাকর্মীরদের এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) শহীদ নূর হোসেন দিবসকে সামনে রেখে আবারও দলীয় ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। কিন্তু মাঠে তেমন কাইকেই দেখা যায়নি।
শনিাবর (৯ নভেম্বর) নোয়াখালীতে একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘আজ ফ্যাসিস্টদের প্রতি অনেকে দরদ ও মায়া দেখাচ্ছে। অনেকে বলছে, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল, তাদের রাজনীতি করার অধিকার ও ভোটাধিকার দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক দল হয় তবে গত ১৬ বছর কেন এ দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার দেয়নি? তারা রাজনৈতিক দল হয়ে থাকলে কেন আমার দুই হাজারের বেশি ভাইবোনকে হত্যা করেছে? কেন গত ১৬ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্ররা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে? সন্ত্রাসী এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য ধরতে না পারলে আমরা বুঝে নেব আপনারাও রাজনৈতিক দলের কাতারে পড়েন না। সন্ত্রাসীরা আজীবনের জন্য সন্ত্রাসী। কোনো সন্ত্রাসী ভবিষ্যতে এ দেশের মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি ও মন্ত্রী হতে পারবে না। সন্ত্রাসী আর রাজনৈতিক দল কখনও এক হতে পারে না।’
তবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের পোশাক খুলে ও ছিঁড়ে যায়। বেলা ১১টার কিছু আগে এ ঘটনা ঘটে। তারা আওয়ামী লীগের কিনা যাছাই করা সম্ভব হয়নি।
‘জিয়ার সৈনিক এক হও’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ স্লোগান দিয়ে একদল লোক তাঁদের পেটায়। যাঁদের পেটানো হয়েছে, তাঁদের কয়েকজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসের পরপরই নিজেদের ফেসবুক পেজে পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন, এই ফ্যাসিবাদী দলের বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গের কোনো প্রচেষ্টাকে তারা বরদাশত করবে না।
এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দুপুর ১টার দিকে ওই জিরো পয়েন্টেই ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে’ গণজমায়েত করে বিক্ষাভ মিছিল করেছে তারা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩ দফা দাবিতে একই দিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে হেনস্তার প্রতিবাদ ও ১৫ বছরে বিভিন্ন হামলায় জড়িতদের বিচারসহ ৩ দফা দাবিতে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কর্যে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে শেষ হয়।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে রাজধানীর গুলিস্তানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে প্রধান সড়কের সামনে তৈরিকৃত গণপ্রতিরোধ মঞ্চে তাদের গণজমায়েত কর্মসূচি শুরু হয়।
গণজমায়েত কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচির শুরুতেই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ছাত্রলীগকে উৎখাত করার জন্য সবার মাঠে নামার প্রয়োজন নাই। শুধু ঢাকা কলেজের ছাত্ররাই যথেষ্ট।
আওয়ামী লীগের নিরীহ ও সাধারণ নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন। রোববার শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বেলা ১১টায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি এ পরামর্শ দেন। রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নিরীহ ও সাধারণ নেতাকর্মীদের বলব, আপনারা আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে দুধ দিয়ে গোসল করে নিন। শেখ হাসিনা আপনাদের কথা ভাবে নাই। সে তার পরিবার ছাড়া কাউকে আপন মনে করে না। এ সময় ২০২৪ ও ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
১৯৯০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার আন্দোলনে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখে প্রতিবাদ জানানোর সময় ১০ ডিসেম্বর পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন। সেই থেকে দিবসটিকে ‘গণতন্ত্র মুক্ত করার দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো।