প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুয়ের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের তালিকায় নাম তুললেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল। গেল অক্টোবরে তিনি ভানুয়াতুর পাসপোর্ট কেনেন। তার আসল নাম আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তফা কামাল নামেই দেশটির পাসপোর্ট নিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু গোল্ডেন পাসপোর্ট নামের এক স্কিমের আওতায় বিদেশিদের কাছে নাগরিকত্ব বিক্রি করে।  এক লাখ ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে এই নাগরিকত্ব কেনা যায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মান প্রায় এক কোটি ছাপ্পান্ন লক্ষ টাকা। মাত্র ১ মাসেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। এমনকি সরাসরি না গিয়েও দেশটির নাগরিকত্ব পেতে কোনো অসুবিধা হয় না। সেই সুযোগই নিয়েছেন লোটাস কামাল।

লোটাস কামালের মতো বিভিন্ন দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, পুলিশের ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা ভানুয়াতুর নাগরিকত্বের সুযোগ নেন। দেশটির পাসপোর্টধারীরা যুক্তরাজ্য ও ইইউসহ ১৩০টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারেন। ভানুয়াতুকে করস্বর্গও বলা হয়। কারণ দেশটিতে আয়কর, কর্পোরেট কর অথবা সম্পদের ওপর কোনো কর নেই। ফলে দেশটি অর্থপাচারকারীদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। আর সেই সুযোগ লুফে নিচ্ছেন লোটাস কামালের মতো নিজ দেশে স্বীকৃতি পাওয়া দুর্নীতিবাজরা।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল দেশে লুটপাটের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তকমা পেয়েছেন। অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে পরিকল্পনামন্ত্রী থাকার সময় দেশের অর্থনীতির মূল সূচকগুলো এদিক-ওদিক করে তুলে ধরায় বানোয়াট পরিসংখ্যানকারীও বলা হয় তাকে।

কুমিল্লা-১০ আসনের পাঁচবারের এমপি লোটাস কামাল পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেও পরিচিতি আছে তার। কিন্তু সব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ। 

অভিযোগ রয়েছে, লোটাস কামাল শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানি সিন্ডিকেটের মাধ্যমেও হাতিয়েছেন বিপুল অর্থ। নিয়ন্ত্রণ করতেন আর্থিক ও ব্যাংক খাত। পেতেন তদবির, নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যের কমিশন। নিজের ও স্বজনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। লোটাস কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের স¤পদও কম নয়। সাবেক এ অর্থমন্ত্রী স্ত্রী, দুই মেয়ে ও পাঁচ নাতি-নাতনির নামে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে হাজার-হাজার কোটি টাকার স¤পদ গড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্বজনপ্রীতিতেও ওস্তাদ ছিলেন লোটাস কামাল। ভাইয়ের মাধ্যমে কবজায় রাখতেন দলীয় পদ-পদবি। টেন্ডার, টিআর ও কাবিখা থেকেও হাতিয়েছেন অর্থ। প্রয়োজন না থাকলেও কুমিল্লায় গ্রামের বাড়ির পাশে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

একসময় লোটাস কামালের পরিচিতি ছিল আদম ব্যবসায়ী হিসেবে। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-৯ আসনের এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার মারা গেলে ভাগ্য খোলে তার। তিনি ১৯৯৬ সালে নৌকার টিকিটে প্রথমবার এমপি হন। ২০০১ সালে পরাজিত হলেও, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই চিকিৎসার অজুহাতে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়েন লোটাস কামাল। গত ২২ আগস্ট কামাল, তার স্ত্রী কাশমেরি কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামালের ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়।

news