খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভায় দলের নেতৃবৃন্দ ৪টি সংস্কার কমিশন কর্তৃক পেশ করা প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তারা সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ ও দুদক সংস্কার কমিশন কর্তৃক জমা দেওয়া প্রতিবেদনগুলোর বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবসম্মত এবং গ্রহণযোগ্য। তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় আদর্শের বিপরীত এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।
খেলাফত মজলিসের মতে, এই দেশ ১৯৪৭ সালে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি থেকে মুসলিম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে স্বাধীনতা লাভ করে। সুতরাং, মুসলিম জাতীয়তা ও ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি অবজ্ঞা করে কোন সংস্কার গ্রহণযোগ্য হবে না। সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবনায় ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি বিভ্রান্তিকর এবং এর মাধ্যমে মুসলিম জাতীয়তার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশিত হতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়।
খেলাফত মজলিস তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায়, সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’, ‘জনগণের অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব’ এবং ‘শোষণ-জুলুম ও বৈষম্যমুক্ত আদর্শ’ থাকা উচিত। একইসঙ্গে, তারা দাবি করে, রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ অক্ষুণ্ণ রাখা এবং কুরআন ও সুন্নাহ বহির্ভূত কোন আইন প্রণয়ন করা যাবে না।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকারকে সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিশেষত নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো পুনরায় যাচাই-বাছাই করতে হবে। তারা উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভেদ নয়, ঐক্য এবং কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং পতিত স্বৈরাচারী সরকারের মিথ্যা বয়ানগুলো পরিহার করতে হবে, যা দেশ ও দেশের মানুষকে বিভক্ত করেছে।
গতকাল সন্ধ্যায়, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাহী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আমীরে মজলিস মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ। বৈঠকটি মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক আবদুল জলিল, প্রশিক্ষণ সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, বায়তুলমাল সম্পাদক আবু সালেহীন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ডা: রিফাত হোসেন মালিক, প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, সাহাব উদ্দিন আহমদ খন্দকার, মুফতি আবদুল হক আমিনী, জিল্লুর রহমান, আলহাজ ফয়জুল ইসলাম, এডভোকেট শায়খুল ইসলাম, আলহাজ আমিনুর রহমান ফিরোজ, অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, আলহাজ নুর হোসেন, হাফেজ নুরুল হক প্রমুখ।
এ বৈঠকে, নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করতে গিয়ে ধর্মীয় ও সাংবিধানিক আদর্শের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখতে হবে, এবং গণতন্ত্র ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি সুসংহত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল ও কর্মসূচির মূল ভিত্তি হবে।


