বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, "শাসক পাল্টেছে, কিন্তু শাসনের চরিত্র বোধহয় পাল্টায়নি।" সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পেশাজীবীদের ভূমিকা, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান এবং শহীদ পরিবার ও নির্যাতিতদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, যারা দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার বদলে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে নানা রকম কৌশল নিয়েছেন, তাদের সতর্ক করে দিতে চাই— শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। জনগণের মনে যদি ধারণা জন্ম নেয় যে শুধু নেতৃত্ব পাল্টেছে, কিন্তু শাসনের ধরন এক, তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় সংকট তৈরি হবে। তাই শহীদদের ঋণ শোধের সময় এখন, দায়িত্ব এড়ানো নয়।
তিনি আরও বলেন, "যারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে বন্দুক রেখে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত, তারাই এখন জাতীয় নির্বাচনের পথে কৌশলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও বিপজ্জনক প্রবণতা।"
তারেক রহমান এ সময় সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশে এই ব্যবস্থার প্রবর্তন হলে চরমপন্থা, বিভাজন ও রাষ্ট্রীয় অস্থিতিশীলতা বাড়বে। বিএনপি মনে করে, এই পদ্ধতি দেশের জন্য উপযোগী নয়। জনগণের ঐক্য রক্ষার স্বার্থে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির কোনো স্থান হওয়া উচিত নয়।”
শহীদদের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হয়নি। এটি আমাদের জন্য ঐতিহাসিক ব্যর্থতা হয়ে থাকবে।” তিনি আফসোস করে বলেন, “শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে যে আগ্রহ রাজনীতিতে দেখা যায়, তা যদি তালিকা তৈরিতে থাকত, তবে এতদিনে তালিকা চূড়ান্ত করা যেত।”
তারেক রহমান বলেন, “গত দেড় দশকে দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের জোয়াল টেনেছে। এই শাসন হটাতে পেশাজীবী, সাংবাদিক, শ্রমিক— সবাই রাজপথে নেমেছেন। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিতে পেরেছে মূলত শ্রমজীবী ও পেশাজীবীদের আত্মত্যাগে।”
তিনি জানান, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় এলে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
এ সময় তিনি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে নিহতদের স্মরণ করা হয় এবং বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হলেও দলের নিজস্ব সংগীত অনুষ্ঠানটি স্থগিত রাখা হয় বিমান দুর্ঘটনার কারণে। অনুষ্ঠানে “আওয়ামী আমলের দুঃশাসন” নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পেশাজীবীদের অবদান নিয়ে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
বিএসপিপি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, ড. মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার, শহীদ ব্রিগেডিয়ার আব্দুর রহিমের ছেলে আবরার রহিম, শহীদ সাংবাদিক হাসান মেহেদীর বাবা মোশাররফ হোসেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ এবং শহীদ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মুক্তাক্কিন বিল্লাহ’র স্ত্রী নাঈম এরিন মিতু।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
