বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের কৃষক মোয়াজ্জেল হোসেনের মুখে আজ হাসি। কারণ, তিনি যে লবণাক্ত পতিত জমিতে কিছুই ফলানো যেত না বলে মনে করতেন, সেই জমিতেই এবার বারি-৪ জাতের লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন। মাত্র সাড়ে তিন মাসে তার দুই বিঘা জমিতে ধরে আছে শতাধিক লাউ, যার প্রতিটির ওজন চার থেকে পাঁচ কেজি। ইতিমধ্যেই তিনি ৬০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন, আরও ৮০-৯০ হাজার টাকার লাউ গাছে রয়েছে।
এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে লবণাক্ততা বাড়ায় বাগেরহাটের ৯ উপজেলার কৃষকরা এখন মাছের ঘেরের বাঁধ ও পতিত জমিতে বারি-৪ জাতের লাউ চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই জাতের লাউ লবণসহিষ্ণু এবং দ্রুতবর্ধনশীল—হেক্টরপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টন পর্যন্ত ফলন হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, বারি-৪ জাতের লাউয়ের বিশেষত্ব হলো এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং ফলনও অনেক বেশি। একটি লাউ ছয়-সাত কেজি পর্যন্ত হয়, যা অন্যান্য সবজির তুলনায় কৃষকদের জন্য বেশি লাভজনক। বাগেরহাটের মাটি এই চাষের জন্য বেশ উপযোগী, বিশেষ করে মাছের ঘেরের বাঁধে বা বাড়ির আঙিনায় সহজেই এটি চাষ করা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, "কৃষকদের পরামর্শ দিয়েই আমরা এই লাউ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। খরচ কম, রক্ষণাবেক্ষণও সহজ—বীজ বপনের পর মাঝেমধ্যে সেচ ও সামান্য জৈব সার দিলেই চলে। প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়, কিন্তু আয় হয় তার কয়েক গুণ।"
স্থানীয় কৃষকরা এখন এই লাউ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আগে যেখানে লবণাক্ত জমি ফেলে রাখতেন, সেখানে এখন তারা লাউয়ের চাষ করছেন। এতে যেমন জমির সদ্ব্যবহার হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে কৃষকের আয়। তবে কৃষকদের আরও সহায়তা দরকার—প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ এবং সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা।
সুন্দরবন সংলগ্ন এই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বারি-৪ লাউ একটি সম্ভাবনাময় ফসল। যদি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কৃষকদের আরও সহায়তা দেওয়া হয়, তাহলে এই চাষ সম্প্রসারিত হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের আয় বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
#লবণাক্ত_জমি_চাষ #বারি৪_লাউ #বাগেরহাট_কৃষি #জলবায়ু_সহিষ্ণু_ফসল #সুন্দরবন_অঞ্চল


