চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলার জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ভোররাতে এক পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যার ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে এলাকা। মৃত এই কনস্টেবল শামিম রেজা সাজু (৩০) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার জুটিাডাঙ্গা গ্রামের হোসেন আলির ছেলে। মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি এই চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন পুলিশ হিসেবে যোগদান করেছিলেন।

দর্শনা থানার অফিসার-ইন-চার্জ মোহাম্মদ শহিদ তিতুমীর জানান, পারিবারিক অশান্তি ও মানসিক চাপই তার আত্মহত্যার কারণ হতে পারে। শুক্রবার সকালে ডিউটিতে অনুপস্থিত থাকায় সহকর্মীরা তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন তার কক্ষের দরজা বন্ধ। জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই ভীতিকর দৃশ্য - সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে শামিমের নিথর দেহ।

চেকপোস্টের ব্যারাকের সেই কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে পোস্টমর্টেমের জন্য। চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মাওলা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন এবং ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে আমাদের সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যার দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা প্রদান, তিনি নিজেই কীভাবে এতটা অসহায় বোধ করলেন যে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন? স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শামিম সম্প্রতি পারিবারিক কিছু সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছিলেন যা তার উপর গভীর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।

মনোবিজ্ঞানী ড. ফারহানা ইসলাম বলেন, "আমাদের সমাজে এখনও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ট্যাবু রয়েছে। বিশেষ করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন, যা পরিণতিতে ভয়াবহ রূপ নেয়।"

গত কয়েক বছরে এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ বাহিনীতে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নিয়ে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কর্মীদের জন্য কাউন্সেলিং সেবা চালু থাকলেও অধিকাংশ সদস্য এই সেবা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

শামিমের সহকর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "সে গত কয়েকদিন ধরে খুব চুপচাপ থাকত। আমরা ভাবিনি বিষয়টা এতটা গুরুতর। যদি আগে থেকে বুঝতে পারতাম..." তার অসম্পূর্ণ বাক্যই বলে দেয় সহকর্মীদের মনের গভীর ক্ষত।

এই ঘটনা আমাদের সামনে আবারও প্রশ্ন তুলে ধরেছে - আমরা কি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মানসিক সুস্থতার দিকে যথেষ্ট নজর দিচ্ছি? শুধু শারীরিক প্রশিক্ষণ নয়, মানসিক ভাবে শক্তিশালী করাও কি তাদের প্রশিক্ষণের অংশ হওয়া উচিত নয়?

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, শামিমের পরিবারকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা হবে। তবে প্রশ্ন থেকে যায় - একটি প্রাণ হারানোর পর এই সহায়তা কতটা সান্ত্বনা দিতে পারে? এই ঘটনা যেন আমাদের সকলকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়, বিশেষ করে যারা সমাজের প্রথম সারিতে থেকে আমাদের সুরক্ষা দেন তাদের বিষয়ে। খবর ইউএনবির

#চুয়াডাঙ্গা #পুলিশ_কনস্টেবল #আত্মহত্যা #মানসিক_স্বাস্থ্য #সামাজিক_সচেতনতা

news