বাংলাদেশের আকাশে এপ্রিলের গরমে জমে উঠেছে মেঘ, হঠাৎ গর্জে ওঠা বজ্রের শব্দে কেঁপে উঠছে জনপদ। ঠিক তেমনি এক দিনে—বৃহস্পতিবার—বজ্রপাতে প্রাণ গেলো তিনজন মানুষের। তিন জেলা, তিনটি আলাদা জীবন, কিন্তু একই নির্মম পরিণতি।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কৃষক মানিক হোসেন মণ্ডল সকালে নিজের জমিতে কাজ করছিলেন। মাথার ওপর তখনও সূর্য, কিন্তু হঠাৎই বদলে গেলো আকাশ। গুমোট আবহাওয়ার পর এক চিলতে বিদ্যুৎ যেন তার জীবনের সব আলো নিভিয়ে দিলো। ৪৫ বছর বয়সী মানিক গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকাজুড়ে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার লাউকোরা গ্রামে একইভাবে প্রাণ গেলো ২৬ বছর বয়সী মো. সাহাব উদ্দিনের। তিনি ধান কাটার কাজ করছিলেন যখন বজ্রপাতের কবলে পড়েন। তার অকালমৃত্যু যেন চাষাবাদের মৌসুমেই কৃষক পরিবারে বয়ে আনল কান্না। তার বাবাও প্রয়াত—এরশাদ হোসেন। সাহাব উদ্দিনের পরিবার এখন শুধু শোকেই ডুবে নয়, সামনে কীভাবে চলবে সেই দুশ্চিন্তাও যেন পাথরের মতো ভারী হয়ে আছে ঘরে ঘরে।
এদিকে বাগেরহাটের মংলা উপজেলায় মৃত্যু এল অন্যভাবে—একজন রাজনীতিকের জীবনে। সোনাখালী গ্রামের সাবেক বিএনপি নেতা মো. নাসির উদ্দিন শেখ দুপুরে বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হন। ৫৫ বছর বয়সী এই নেতাকে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বজ্রপাত বাংলাদেশে বর্ষাকাল বা কালবৈশাখী মৌসুমে নতুন কিছু নয়, কিন্তু প্রতিবছরই তা কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। অথচ খুব সাধারণ কিছু সচেতনতা মেনে চললেই অনেকগুলো জীবন বাঁচানো সম্ভব। খোলা মাঠে কাজ করার সময় আকাশে মেঘ জমলে দ্রুত আশ্রয় নেওয়া, গাছপালার নিচে না দাঁড়ানো, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকা—এসব ছোট ছোট অভ্যাসই হতে পারে জীবন বাঁচানোর চাবিকাঠি।
গ্রামবাংলার বাস্তবতা হলো, কৃষিকাজ বা মাছ ধরা জীবন-জীবিকার অংশ। মানুষ অনেক সময় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নেয়। কিন্তু এখন সময় এসেছে সচেতনতা বাড়ানোর—চাষের জমি বা মাছের ঘেরে কাজ করতে নামার আগে একবার আকাশের দিকে তাকানোই হতে পারে বেঁচে থাকার প্রথম পদক্ষেপ।
এমন মৃত্যু আমাদের কাঁদায়, ভাবায় এবং প্রশ্ন তোলে—এই আধুনিক যুগেও আমরা কি যথেষ্ট প্রস্তুত প্রকৃতির রুদ্ররূপের বিরুদ্ধে? খবর ইউএনবির
#বজ্রপাত #বাংলাদেশগ্রামজীবন #মানবিকদুর্যোগ #সচেতনহোন #জীবনবাঁচান


