রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে নানা আলোচনা, নানা টানাপোড়েন। কিন্তু এমন সংকটের মাঝেও কেউ কেউ থাকেন, যারা পথ দেখান। ড. মুহাম্মদ ইউনূস তেমনই একজন, যাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্ব নিয়ে এবার সরাসরি প্রশংসা জানাল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ড. ইউনূস এই সংকটকে কেবল একটি বিচ্ছিন্ন সমস্যা হিসেবে দেখছেন না—তিনি এটিকে মিয়ানমারের সামগ্রিক বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন, এবং এটাই তাঁকে আলাদা করে তোলে।
ঢাকায় ড. ইউনূসের সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’তে এক সৌজন্য সাক্ষাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী সচিব নিকোল অ্যান চুলিক বলেন, “আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মিয়ানমারের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খোঁজার প্রয়াস বাস্তবসম্মত এবং দীর্ঘমেয়াদী।”
বলা চলে, ড. ইউনূস ঠিক সেই কাজটিই করছেন যা সাধারণত অনেক রাজনীতিবিদ বা প্রশাসক এড়িয়ে চলেন—তিনি সমস্যা সমাধানে মূল জায়গায় হাত দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক ব্যুরোর উপসহকারী সচিব অ্যান্ড্রু আর হেরাপও। তাঁরা শুধু রোহিঙ্গা নয়, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়েও ড. ইউনূসের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইন রাজ্যে ফেরত যাওয়ার উপযুক্ত বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে বড় এক অগ্রগতি।” তাঁর কণ্ঠে ছিল আশাবাদের সুর। বাস্তবতা কঠিন হলেও তিনি তাতে পিছিয়ে পড়েননি।
এ আলোচনা থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশের উদারতা নয়, নেতৃত্বের বিচক্ষণতাও গভীরভাবে মূল্যায়ন করছে। তারা জানায়, ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা সত্যিই অনন্য। এতে ড. ইউনূসের নেতৃত্ব ও তাঁর অন্তর্দৃষ্টিমূলক কূটনৈতিক মনোভাব অনেকটাই কার্যকর হয়েছে বলে স্বীকার করে তারা।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে আলোচনায়—বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। ড. ইউনূস স্পষ্ট করেই বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে, বিশেষ করে বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসন রোহিঙ্গাদের জন্য যে সাহায্য পুনরায় চালু করেছে এবং পারস্পরিক শুল্ক আরোপে যে ৯০ দিনের বিরতি দিয়েছে, তা নিয়েও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সব মিলিয়ে, বৈঠকটা ছিল শুধু কূটনৈতিক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি ছিল ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত। বাস্তবতার কঠিন জমিনে দাঁড়িয়ে একজন নেতা কীভাবে দূরদৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন, তার এক জীবন্ত উদাহরণ ড. ইউনূস।
এই মুহূর্তে যখন বিশ্ব নানা বিভাজনে বিভ্রান্ত, তখন এমন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে আমাদের আশাবাদী করে তোলে। খবর ইউএনবির
#রোহিঙ্গাসংকট #ডমুহাম্মদইউনূস #যুক্তরাষ্ট্রবাংলাদেশসম্পর্ক #আঞ্চলিকসহযোগিতা #মানবিকনেতৃত্ব


