তামাক মানেই ধোঁয়ার কুন্ডলি, আর তার পেছনে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য অসুখ-বিসুখের ভয়াল ছায়া। এই ছায়া থেকে দেশকে মুক্ত করতে এবার এক কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন দেশের ১৫০ জন স্বনামধন্য চিকিৎসক। তাঁরা বলছেন, যদি সত্যি আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ চাই, তাহলে তামাকজাত দ্রব্যের দাম ও কর বাড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

 

ভাবুন তো, প্রতিদিন গড়ে কত মানুষ আমাদের চারপাশে সিগারেটের ধোঁয়ায় হাঁসফাঁস করছে, অথচ ধূমপান করছেন না। অফিসে, রাস্তায়, এমনকি বাসায়ও এই ধোঁয়া ঢুকে যাচ্ছে ফুসফুসে। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের মতে, প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ দেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার! আর এতে করে হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার, স্ট্রোক—সব রোগের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

 

এই ভয়াবহ অবস্থার মোকাবিলায় আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে ১৫০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এক জোট হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ডাঃ সৈয়দ আকরাম হোসেন, ডাঃ এম এ হাই, ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ডাঃ শরিফুল আলমসহ আরও অনেক ক্যান্সার যোদ্ধা। তাঁরা সবাই বলছেন, কর বাড়ালে দাম বাড়বে, দাম বাড়লে তামাকের ব্যবহার কমবে। এতে যেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে, তেমনি সরকারের রাজস্বও বাড়বে।

 

এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সস্তা সিগারেট—প্রতি শলাকা মাত্র ৬ বা ৮ টাকা। চিকিৎসকদের প্রস্তাব, এই দুই স্তরের সিগারেট একত্র করে প্রতি শলাকার দাম কমপক্ষে ৯ টাকা করতে হবে। এতে তরুণ ও গরিব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপানের হার কমবে। পাশাপাশি সরকারও পাবে ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয়। কল্পনা করুন, শুধু দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে প্রায় ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত থাকবে! আর প্রায় ৮ লাখের বেশি মানুষ অকালে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসবে।

 

তামাকের নেশা আসলে শুরু হয় সহজলভ্যতা দিয়ে। দোকানের কোণায় পড়ে থাকা এক প্যাকেট সিগারেট, বা বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় একটি বিড়ি—সেখান থেকেই শুরু হয় এক জীবনের বিষ। তাই এই জীবন বিষমুক্ত রাখতে, একটুখানি সাহসী সিদ্ধান্ত দরকার আমাদের সবার। চিকিৎসকদের কথায়, তামাকের শেকড় কেটে ফেলতে হলে কর কাঠামোই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সময় এখন কাজের, সময় এখন বদলের।

 

#তামাকমুক্ত_বাংলাদেশ #স্বাস্থ্য_সুরক্ষা #কর_বৃদ্ধি #ধূমপান_নিরুৎসাহ #জীবন_বাঁচুক

news