ঈদে ঘরে ফিরতে গিয়ে ৭ দিনে দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক

ঈদ মানেই আনন্দ। এই আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতেই প্রতি বছর দুর্ভোগ আর ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরেন মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় কারো আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে। 

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আরো একদিন বাকি থাকলেও গত ৭ দিনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১০১ জন। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। ৯১ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া যাত্রীদের বেশিভাগ মটরসাইকেল যাত্রী। 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, ২৫ এপ্রিল ৩০ এপ্রিল রাত ১২ টা পর্যন্ত ৮৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৭ জন মারা যায়। সংগঠনটি ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। 

এদিকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাক চাপায় পিষ্ট হয়ে মো. শহিদুল ইসলাম (৫০) নামে এক গার্মেন্টস কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে দুই চালকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।  

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশি মানুষ বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে বলে মনে সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় রাস্তাঘাট তুলনামূলক ভালো ছিলো। তবে ফিরতি যাত্রা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

জনাব সাইদুর বলেন, প্রতি বছর দেখা যায় যাওয়ার পথে তৎপরতা থাকে ফেরার পথে তা থাকে না। তখন দুর্ঘটনা খুব বাড়ে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সরকারকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে গড়ে ১২৫ জন মারা যায়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় ৫ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে। 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ঈদে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ও ৬২২ জন আহত হয়। এতে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত ও ১৯৯ জন আহত হয়। ঈদ মৌসুমে দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাওয়ার কারণ

বাংলাদেশের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একজন সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ঈদ যাত্রায় পরিবহণ চাহিদা বেড়ে যায়, পথচারীর সংখ্যা বাড়ে, যাত্রীর সংখ্যা বাড়ে, ফলে ছাদের ওপর যাত্রী যায়, আনফিট গাড়ির সংখ্যা বাড়ে, আনফিট ড্রাইভারের সংখ্যাও বাড়ে। এসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটার যেসব সম্ভাবনা থেকে যায়, তা থেকেই দেখা যাচ্ছে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।

তিনি বলেন, বাস ও অন্যান্য যানবাহনের চালকদের দক্ষতা এবং নির্মাণকাজসহ সব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। এ ক্ষেত্রে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শুধু যাত্রী ও চালক নন, পথচারী সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা জরুরি।

news