ঈশ্বরদীতে খরায় ঝরে পড়ছে লিচু, লোকসানের শঙ্কা

সলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের লিচুচাষি আবুল কালাম আজাদ। তাঁর রয়েছে ৪০টি লিচুগাছ। মুকুল আর লিচুর গুটিতে ভরা ছিল গাছগুলো। আশা করেছিলেন বাম্পার ফলনের। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের টানা খরা আর প্রচণ্ড তাপের কারণে ২৫টি লিচুগাছের লিচু ঝরে পড়েছে। যে ১৫ গাছে কিছু লিচু আছে, সেগুলোর বেশির ভাগ লিচুর অর্ধেক অংশ পুড়ে শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। আর অর্ধেক অংশ সবুজ।

একই পরিস্থিতি গ্রামের নোমান মিয়া, মো. খসরু ও আলমগীর হোসেনের দুই শতাধিক লিচুগাছের। গত কয়েক দিনের অনাবৃষ্টিতে আর গরমের তাপে বাগানের প্রায় সব গাছের লিচু ঝরে পড়েছে। ছফির উদ্দিনের ৩০টি গাছের মধ্যে বেশির ভাগ লিচুগাছের লিচু খরায় ঝরে পড়ছে। যেগুলোতে কিছু লিচু আছে, সেগুলোও শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় অনেকের কাছে প্রধান অর্থকরী ফসল লিচু। চাষিরা জানান, এ বছর বাম্পার ফলনের আশা দেখিয়েও খরার কারণে লিচু ঝরে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। প্রচণ্ড খরায় লিচু শুকিয়ে আকার ছোট হয়ে গেছে এবং কিছু লিচুর অর্ধেক অংশ কালো হয়ে গেছে। প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সলিমপুর, সাহাপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা, দাশুড়িয়া, সাড়া, মুলাডুলি, জয়নগর, মানিকনগর, মিরকামারি, আওতাপাড়া, বড়ইচড়া, বাঁশেরবাদা, চাঁদপুর চর, কামালপুর চর গ্রামের প্রতিটা বাড়ির উঠান, বাড়ির সামনের অংশ, পুকুরপাড়, খেতের আইলসহ চারদিকে কয়েক হাজার লিচুগাছ। গ্রামের প্রায় কয়েক বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে হাজার হাজার লিচুগাছ রয়েছে। যে কারণে গ্রাম গুলো এখন লিচু গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ গাছই এখন লিচুশূন্য। অথচ কয়েক দিন আগেও লিচুর গুটিতে ভরপুর ছিল লিচুগাছ।

গ্রামে গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কৃত্রিম মেশিন দিয়ে লিচুগাছে পানি ছিটাচ্ছেন লিচুচাষি মো. রাজিব। তিনি বলেন, ‘এ বছর লিচুগাছ মুকুলে ভরপুর ছিল। আমরা আশা করেছিলাম বাম্পার ফলনের। আমাদের নিজস্ব দুই শ গাছ রয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক গাছ আরও কিনে রেখেছিলাম। এখন ধানখেতের পাশে যে গাছগুলো রয়েছে, সে গাছগুলোর লিচু ভালো রয়েছে। তবে অন্য চাষিদের লিচুর অবস্থা খুবই খারাপ।

পাবনা অঞ্চলে ঈশ্বরদীর খ্যাতি এখন ‘লিচুর রাজধানী’ হিসেবে। এখন প্রতিটি গাছ টসটসে লিচুতে ভরপুর থাকার কথা। কিন্তু টানা তাপপ্রবাহ এই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে।

লিচুচাষি আল মামুন বলেন, তার ৪০টি গাছের মধ্যে গত এক সপ্তাহের মধ্যে ২৫টি গাছের প্রায় সব লিচু প্রচণ্ড খরার কারণে ঝরে পড়েছে। বাকি যেগুলোয় এখনো কিছু লিচু আছে, সেগুলোয়ও খরা–রোদের তাপে কালো দাগ হয়ে লিচু পুড়ে যাচ্ছে।

অপর লিচুচাষি ছফির উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টি থাকলে আমরা এখন লিচু ভাঙা শুরু করতে পারতাম। কিন্তু খরার কারণে লিচুচাষিদের মাথায় হাত। প্রতিবছর এ গ্রাম থেকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার লিচুচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বিষয়টি নজরে আনা হলে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, এখানে তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিক বাগান রয়েছে। গাছের সংখ্যা তিন লাখের ওপর। এর মধ্যে দেড় লাখ গাছের বয়স ১৭-১৮ বছরের বেশি। এ ছাড়া সারা উপজেলাতেই বসতবাড়ির আশপাশেও রয়েছে প্রচুর লিচুগাছ। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে।  অন্যান্য বছর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকার  লিচু বেচাকেনা হতো। তবে এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে অন্যান্য ফলফলাদির ন্যায়  লিচুচাষিরাও অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।ৎ

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা বলেন, ‘কৃষি কার্যালয় থেকে লিচুবাগানের খোঁজখবর ও চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লিচু ঝরে পড়ে।

news