আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে কমছে না ভোজ্যতেলের দাম

বিশ্বব্যাপী সয়াবিন ও পাম অয়েলের উৎপাদনও এখন বাড়ছে। সেই সঙ্গে সরবরাহ বৃদ্ধির খবরে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোজ্যতেলের মূল্যহ্রাস অব্যাহত রয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। কিন্তু দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। বণিক বার্তা ও জনকন্ঠ

সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতিলিটার ১৫৮ টাকা হলেও খুচরা ক্রেতাদের পামঅয়েল তেল ১৭২-১৭৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা কৌশলে সয়াবিন তেলের দাম আরেকদফা বাড়িয়ে নিয়েছেন। নতুন নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন। প্রতি পাঁচ লিটারের বোতল ৯৯৭ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও ক্রেতাকে ১০২০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। 

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ বিপণনবর্ষে সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়বে ৪ শতাংশ। অন্যদিকে পাম অয়েলের দুই শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পাম উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ ফিরে আসার পাশাপাশি শ্রমিক সংকট কেটে যাওয়ারও জোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সে অনুযায়ী ২০২২-২৩ বিপণনবর্ষে পাম অয়েলের উৎপাদন বাড়বে ৩ শতাংশ। বাজার পর্যবেক্ষণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাও প্রায় একই রকম পূর্বাভাস দিয়েছে।

শীর্ষ বাজারে ভোক্তা চাহিদা কমার পাশাপাশি এসব পূর্বাভাসের প্রভাবে প্রায় সব ধরনের ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজারদর এখন নিম্নমুখী। সর্বশেষ গতকাল একদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে টনপ্রতি ৮২ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) গতকাল প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম নেমে আসে ১ হাজার ৬৩০ ডলারে। আগের দিনও তা কেনাবেচা হয়েছে টনপ্রতি ১ হাজার ৭১২ ডলারে। এক সপ্তাহ আগে এর মূল্য ছিল প্রতি টন ১ হাজার ৭৮১ ডলার। সে হিসেবে একদিনে পণ্যটির দাম কমেছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সপ্তাহে কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ।

নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে পাম অয়েলের দামেও। এক সপ্তাহ আগেও সিবিওটিতে পণ্যটির মূল্য ছিল প্রতি টন ১ হাজার ৩৬০ ডলার। বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩২৮ ডলারে। সেখান থেকে গতকাল নেমে এসেছে ১ হাজার ৩১৯ ডলারে। ভোজ্যতেলটি এর চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে কুয়ালালামপুরের বুর্সা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে। সেখানে গতকাল দিনশেষে পণ্যটির মূল্য নেমে এসেছে প্রতি টন ৫ হাজার ৪৫৬ রিঙ্গিতে (১ হাজার ২৪০ ডলারের সমপরিমাণ)। গত এক সপ্তাহে বুর্সা ডেরিভেটিভসে পণ্যটির দাম কমেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে দরপতনের হার ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বাভাসের পাশাপাশি শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া এখন পাম অয়েলের রফতানি বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। একই পথে হাঁটছে মালয়েশিয়াও। বাজারে এখন এরই প্রভাব স্পষ্ট বলে জানিয়েছেন বুর্সা ডেরিভেটিভসের ট্রেডাররা।

বাজার-সংক্রান্ত প্রায় সব পূর্বাভাসেই বলা হচ্ছে, ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজারের নিম্নমুখিতা অব্যাহত থাকবে আরো বেশ কিছুদিন। শিগগিরই এ পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এর ভিত্তিতে দেশে দেশে ভোক্তা বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও সূর্যমুখী তেলের দাম লিটারে ৫ থেকে ১৫ রুপি পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। গত ১১ জুন সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের মধ্যে পাম অয়েলের লিটারপ্রতি দাম ১৪ টাকা কমানো হলেও সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৭ টাকা। শিগগিরই দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন বাজারের নীতিনির্ধারকরা।

ভোজ্যতেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিপণন কার্যক্রমকে ‘বিশেষায়িত’ আখ্যা দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দ্রুততম সময়ের ব্যবধানে দাম সমন্বয়ের সুযোগ নেই। গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম টনপ্রতি প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ডলার পর্যন্ত কমলেও এর সুফল পেতে দেশের ভোক্তাদের অপেক্ষা করতে হবে অন্তত দেড় মাস। বিশ্ববাজারের প্রভাব বিশ্লেষণ করে আগামী কোরবানির ঈদের আগে দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, ভোজ্যতেল আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির সদস্যরা বৈঠকের মাধ্যমে বিগত কয়েক মাস আগে আমদানি হওয়া ইনবন্ড-আউটবন্ড ভোজ্যতেলের তথ্য পর্যালোচনা করে দাম নির্ধারণ করে। এজন্য একটি সূত্র মেনে চলা হয়। যার কারণে বর্তমান সময়ে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও এর সুফল পেতে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়। সর্বশেষ দাম সমন্বয় হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। নতুন দাম ঘোষণা করতে অন্তত আরো এক মাস লাগবে।

news