দেশের শিল্প খাত বর্তমানে এক গভীর সংকটে রয়েছে, যার প্রধান কারণ গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট। শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদের হারও আকাশচুম্বী হয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য এক নতুন চাপ। বর্তমানে সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭-১৮ শতাংশে পৌঁছেছে। এসব কারণে, বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
বাংলাদেশে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হলে তা শিল্প খাতকে আরও সংকটে ফেলবে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রোববার ঢাকায় পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেন, গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হলে, উৎপাদন খাতের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাবে। এতে দেশের আমদানিনির্ভরতা বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বাড়ানো হলে সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক শিল্পে আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাংকিং খাতেও চাপ পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণের সংখ্যা বাড়বে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠিত করা এবং পুরনো শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি সরকারের কাছে গ্যাসের দাম কমানোর দাবি জানান, না হলে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে পারে।
এছাড়া, টেক্সটাইল খাতের সমস্যাও উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের সংকট এবং ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর কারণে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্প চরম দুরবস্থায় পড়েছে। তিনি সরকারকে টেক্সটাইল খাতের স্বার্থ রক্ষা করার আহ্বান জানান।
যেহেতু শিল্পের জন্য গ্যাসের সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই দেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা দেশের শিল্প খাতকে আরও সংকটে ফেলবে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।


