দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর—শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মানব উন্নয়ন সূচক, মাথাপিছু জিডিপি ও জীবনমান—সব দিক থেকেই বিশ্বের অন্যতম অগ্রগামী দেশ। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায় সিঙ্গাপুরের নাম আজ বিশ্বজুড়ে আলোচিত। দেশটির বিখ্যাত মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল ও সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল বিশ্বমানের চিকিৎসার জন্য সুপরিচিত। আর এখন এই দুই বিশ্বখ্যাত হাসপাতালে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ওয়ালটনের স্মার্ট ইনভার্টার চিলার—যা দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার এক গৌরবময় মাইলফলক হয়ে উঠেছে।

ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানায়, স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ওয়ালটন এসি। উন্নতমান, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, এআই ও আইওটি-ভিত্তিক স্মার্ট ফিচার এবং শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির কারণে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করছে ব্র্যান্ডটি। ফলে একের পর এক নতুন দেশে বিস্তৃত হচ্ছে ওয়ালটনের বাজার।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের শীর্ষ এয়ার কন্ডিশনিং প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লেয়ার এমঅ্যান্ডই প্রাইভেট লিমিটেড’ ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করেছে দেশটিতে। তাদের তত্ত্বাবধানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ইতোমধ্যে ওয়ালটনের স্মার্ট ইনভার্টার চিলার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালেও স্থাপনের কাজ চলছে জোরেশোরে।

ওয়ালটন এসি’র চিফ বিজনেস অফিসার মো. তানভীর রহমান বলেন, “একসময় আমরা সিঙ্গাপুর থেকে এসির কাঁচামাল আনতাম। এখন সেই সিঙ্গাপুরেই রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি সর্বাধুনিক ভিআরএফ ও চিলার সিস্টেম। মাউন্ট এলিজাবেথ ও জেনারেল হাসপাতালের মতো উচ্চমানের স্থাপনায় ওয়ালটনের পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে—এটা শুধু ওয়ালটনের নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য গর্বের।”

শুধু তাই নয়, ওয়ালটন এখন দেশের একমাত্র ভিআরএফ ও স্মার্ট ইনভার্টার চিলার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের মাত্র ৯টি দেশ এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে পারে, এবং তাদের মধ্যে বাংলাদেশ এখন গর্বের সঙ্গে অবস্থান করছে। কোম্পানিটি বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে রিসার্চ, ইনোভেশন ও টেকনোলজিতে—যেখানে পরিবেশবান্ধব ও এনার্জি ইফিশিয়েন্ট প্রযুক্তিই মূল ফোকাস।

ওয়ালটন ভিআরএফ সিস্টেমে রয়েছে অত্যাধুনিক Brazed Plate Heat Exchanger (BPHE) প্রযুক্তি, যা কুলিং দক্ষতা বাড়ায়। এতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেন্ট পিসিবি কুলিং প্রযুক্তি সিস্টেমের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। এ সিস্টেম ১৩০% পর্যন্ত কম্বিনেশন রেশিও এবং ১০০ মিটার পাইপিং লেন্থ সাপোর্ট করতে পারে—যা বড় ভবন বা জটিল প্রকল্পের জন্য আদর্শ। এছাড়া অটো ডাস্ট রিমুভাল ও লোড শেয়ারিং ফিচার পণ্যের স্থায়িত্ব বাড়ায়, আর টেন-স্টেজ অয়েল কন্ট্রোল কম্প্রেসর দেয় দীর্ঘ মেয়াদি নিশ্চয়তা।

ওয়ালটন চিলারগুলোতে রয়েছে ইনভার্টার কম্প্রেসর, স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেম (PLC ও টাচ স্ক্রিন), কম শব্দে অপারেশন এবং অটোমেটিক সেফটি সিস্টেম। রক্ষণাবেক্ষণও সহজ। গুণগত মান ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় ওয়ালটন পেয়েছে ISO 14001, ISO 45001, ROHS, CE ও BSTI সার্টিফিকেট। এছাড়া পণ্যগুলো পরীক্ষা করা হয় NUSDAT-UTS অ্যাক্রেডিটেড ল্যাব-এ, যা আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে।

স্থানীয়ভাবে উন্নতমানের ভিআরএফ ও চিলার তৈরি করে ওয়ালটন শুধু বাংলাদেশের এয়ার কন্ডিশনিং শিল্পকেই শক্তিশালী করছে না; বরং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন পথও খুলে দিচ্ছে।

ওয়ালটনের লক্ষ্য এখন আরও বড়—বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড হয়ে উঠা এবং বাংলাদেশকে প্রযুক্তিনির্ভর হাই-টেক পণ্য উৎপাদনের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার ৫০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, আর লক্ষ্য—১০০টিরও বেশি দেশে ওয়ালটনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশের প্রযুক্তি শিল্পে এক নতুন অধ্যায় লিখছে ওয়ালটন—আর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালগুলোয় তাদের পণ্য ব্যবহার, সেই গল্পেরই গর্বিত উদাহরণ।

news