আগাম শীতকালীন সব‌জি চাষ, ভালো দামে খু‌শি কৃষক

শোরে আগাম শীতকালিন সবজিতে ভরপুর মাঠ। এবার সবজিও হয়েছে বেশ। তাই নানা রকমের সবজি বাজারজাতে চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দামও বেশি পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। তারা বলছেন, বর্তমানে সবজি বেশি দামে বিক্রি করতে পারায় আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার জেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, য‌শোর সদর উপ‌জেলার চুড়ামনকাটি, আব্দুলপুর ছাতিয়ানতলা, শানতলা, নুরপুর, বাগডাঙ্গা, দোগাছিয়া, সাজিয়ালী, শ্যামনগর ও কমলাপুরস হৈবতপুর, তীরেরহাট, মানিকদিহি, মথুরাপুর, শাহাবাজপুর, মুরাদগড়, কাশিমপুর, বিজয়নগর, দৌলতদিহি, বালিয়াঘাট, ললিতাদাহ, বালিয়াডাঙ্গা, বেনেয়ালী, ডহেরপাড়া, লাউখালী, নাটুয়াপাড়াসহ বিভিন্ন মাঠ আগাম শীতকালিন সবজিতে ভরা। চৌগাছা উপ‌জেলার  পা‌তি‌বিলা, হায়াতপুর, যাত্রাপুর, জগদীশপুর, মির্জাপুর, কা‌ন্দী, স্বর্পরাজপুর, মাড়ুয়া, ঝিনাইকুন্ড, সা‌দিপুর, জা‌মিরা ইছাপুর গ্রা‌মে যেদিকে নজর পড়ছে সেদিকেই দেখা মিলছে নানা প্রকারের সবজি ক্ষেতের।

এর মধ্যে সিম মুলা, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন,পটল, উল্লেখযোগ্য। সবজি চাষি শফিকুল ইসলাম, মন্টু মিয়া, মনিরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ফয়জুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, আবুল কাশেম, রন্টু মিয়া, আবুল কালাম, হাসানুর রহমান, সেলিম রেজা, রিপন হোসেন, জামাল উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম, আশাদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, বজলু মিয়াসহ অনেকেই জানান, এবারের মৌসুমে সব ধরণের সবজিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য বেশি থাকায় তারা প্রতিদিনই সবজি বাজারজাত করছেন। গতবার বৃষ্টিপাতের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু এবার সময়োপযোগী আবহাওয়া ও পরিমাণ মতো বৃষ্টির কারণে ফলন হয়েছে। এখন বাজার দর ভালো হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে এবার লাভবান হবেন বলে আশাবাদী।

চাষিরা আরো জানান, তবে সুযোগ বুঝে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবজির দাম কমিয়ে দেয়। তখন তারা কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন। চৌগাছা, বারীনগর ও চুড়ামনকাটি এলাকায় যদি একটি কোল্ড-স্টোরেজ থাকতো তাহলে দাম কমের সময় সবজি বিক্রি না করে সংরক্ষণ করার সুযোগ পেতেন। তখন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট তাদের দুর্বল করতে পারতেন না। পরে বাজার বুঝে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ পেতেন চাষীরা।

যশোর শহরের বড় এলাকার সবিজ বিক্রেতা শঙ্কর কুমার জানান, আগাম শীতকালিন সবজির ভালো দাম পাচ্ছে চাষীরা। পাইকারী হাটে প্রতি কেজি সিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও ফুল কপি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়া টমেটো ৬০/৬৫ টাকা, মূলা ৫০/৬০ টাকা ও বাধা কপি ৬০/৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবজির একটি বড় অংশ উৎপাদিত হয় যশোরে। গ্রীষ্মকালিন, আগাম শীতকালিন ও শীতকালিন এই ৩ভাগে ১২ মাস সবজির চাষ হয়ে থাকে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির চাষ হয় যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে। নতুন করে বাঘারপাড়া ও মণিরামপুরের কিছু এলাকা যোগ হয়েছে। এছাড়া চৌগাছা উপ‌জেলায়ও বর্তমা‌নে প্রচুর সব‌জি উৎপাদন হয়। এবার যশোর সদর উপজেলায় আগাম শীতকালিন আগাম সবজির চাষ হয়েছে ২৮শ’ হেক্টর। এরমধ্যে সবজি খ্যাত হৈবতপুর ইউনিয়নে ১৩শ’ ২৮ হেক্টর, চুড়ামনকাটি  ইউনিয়নে ৪শ’ ২৫ হেক্টর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ২শ’ ৮৩ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালিন সবজির চাষ হয়েছে। এই এলাকার সবজির সুনামের পাশাপাশি ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান। 

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মঞ্জরুল হক জানান, যশোর সবজির জেলা হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। এখানকার সবজির সুনাম অনেক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশ বিদেশের বাজারে। 

তিনি আরো জানান, এবার জেলায় গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ হয় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। আর ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালিন সবজি চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন পেয়েছে। দামও পাচ্ছে অনেক। এতে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। পুরো শীতকালে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

উপপরিচালক মঞ্জরুল হক আরো জানান, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম থাকায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে সবজি চাষিরা লাভবান হলেও ধান চাষিরা একটু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সবজির দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে চাষিরা আরও বেশি জমিতে সবজি চাষে আগ্রহী হবেন।

news