“আর এক দিন পর বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হবে ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫। কিন্তু ইংরেজি ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি কীভাবে? কেন বছর ১২ মাসে ভাগ হলো? এবং কেন যিশুর জন্মদিন নয়, ১ জানুয়ারি বর্ষবরণের দিন?
“ইংরেজি ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি এবং এর ঐতিহাসিক বিবর্তন সম্পর্কে আজকের প্রতিবেদন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, খ্রিস্টীয় পঞ্জিকার শুরু থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার পর্যন্ত কীভাবে আমরা পেয়েছি বর্তমান সময় গণনার পদ্ধতি।
“যিশুর জন্মের আগে থেকেই ক্যালেন্ডারের ব্যবহার ছিল। খ্রিস্টপূর্ব সময়ে ব্যাবিলনীয় ক্যালেন্ডার ব্যবহৃত হতো, যা ১০ মাসে বিভক্ত ছিল। নতুন বছর শুরু হতো মার্চে, যখন প্রকৃতি নতুন জীবন ধারণ করত।
কিন্তু রোমান সাম্রাজ্যে এই ক্যালেন্ডার পরিবর্তিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার জুলিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করেন, যা ১২ মাসে বিভক্ত। এতে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি নামে নতুন দুই মাস যুক্ত হয়।”
“জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে বছর ১২ মাসে বিভক্ত হলো, কিন্তু কেন জানুয়ারি থেকেই শুরু হলো নতুন বছর?”
“জানুয়ারি মাসের নামকরণ হয়েছিল রোমান দেবতা জানুস-এর নামে। জানুস ছিলেন দ্বিমুখী দেবতা, যিনি অতীত এবং ভবিষ্যৎ দু’টি দিকেই তাকিয়ে থাকতে পারতেন।
জুলিয়াস সিজার বিশ্বাস করতেন, জানুয়ারি থেকে নতুন বছর শুরু করা প্রতীকী অর্থে সঠিক হবে। তাই খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সাল থেকে জানুয়ারি মাস দিয়ে বছর শুরু করার প্রচলন শুরু হয়। এটি তখন পুরো রোমান সাম্রাজ্যে গৃহীত হয়।”
“যিশুর জন্মের পরে খ্রিস্টাব্দ শুরু হলেও, কেন তার জন্মদিনে নতুন বছর পালিত হয় না?”
“খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫০০ বছর পরে ধর্মপ্রচারক দিউনিসিয়াস এক্সিগুস নতুন সময় গণনার পদ্ধতি প্রস্তাব করেন। তিনি খ্রিস্টের জন্মকে সময় গণনার সূচনা হিসেবে ধরে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেন।
তবে, যিশুর জন্মদিনে নয়, বর্ষবরণ উদযাপন করা হয় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে। এর একটি ধর্মীয় কারণও রয়েছে। ইহুদি প্রথা অনুযায়ী, পুত্রসন্তানের জন্মের অষ্টম দিনে খৎনা এবং নামকরণ করা হতো। যিশুর ক্ষেত্রেও এই প্রথা অনুসরণ করা হয়। তাই তার জন্মের অষ্টম দিন থেকেই বর্ষগণনা শুরু হয়।”
“তাহলে, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার কীভাবে বর্তমান পঞ্জিকার রূপ নিল?”
“জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে দিন গণনার কিছু ত্রুটি ছিল। লিপ ইয়ার নিয়ম না থাকায় সময়ের সাথে সাথে দিন এবং ঋতুর মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।
১৫৮২ সালে পোপ গ্রেগরি ত্রয়োদশ এই সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করেন। এটি আধুনিক সময়ের ক্যালেন্ডারের ভিত্তি। গ্রেগরিয়ান পদ্ধতিতে লিপ ইয়ার নির্ধারণের নিয়ম চালু হয়, যা আমাদের বর্তমান ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাকে আরও নির্ভুল করে।”
“তাহলে কেন এখনো কিছু দেশে ভিন্ন ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়?”
“পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে এখনও ধর্মীয় উৎসব পালনে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মতো দেশগুলো ৬ জানুয়ারিতে বড়দিন এবং ১৪ জানুয়ারিতে নতুন বছর উদযাপন করে। তবে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য এবং দৈনন্দিন জীবনে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই প্রধান পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।”
“ইংরেজি ক্যালেন্ডারের এই ঐতিহাসিক যাত্রা আমাদের সময় এবং সংস্কৃতির ওপর কী প্রভাব ফেলেছে?”
“ইংরেজি ক্যালেন্ডার শুধু সময় গণনার একটি পদ্ধতি নয়, এটি বৈশ্বিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যেরও একটি অংশ।
নববর্ষ উদযাপন এখন একটি সার্বজনীন উৎসব। তবে এর পেছনের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আমাদের সময় এবং সংস্কৃতিকে গঠন করেছে।”
“ইংরেজি ক্যালেন্ডারের এই বিবর্তন আমাদের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজকের এই প্রতিবেদন এখানেই শেষ।”


