রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন স্থগিত করল সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ ব্রিটিশ আমলের রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এরফলে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে বড়সড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সংবিধানের ১২৪-এ ধারা বাস্তবায়িত করার পর এই প্রথমবার এটি স্থগিত রাখা হল। কেন্দ্রীয় সরকার পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত ১৬২ বছরের পুরোনো এই আইনটি এই প্রথমবার এটি স্থগিত করা হয়েছে।
আজ (বুধবার) একটি অন্তর্বর্তী আদেশে আদালত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলোকে পুনঃবিবেচনা না করা পর্যন্ত উল্লিখিত আইনের অধীনে কোনও এফআইআর নিবন্ধন করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনার সমন্বিত তিন বিচারপতির সমন্বিত বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল, যতদিন রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনা চলছে, ততদিন কী এই আইনের আওতায় রুজু হওয়া মামলা স্থগিত রাখা যায়? কেন্দ্রীয় সরকার কী রাজ্যগুলোকে এই আইন প্রয়োগ করে কোনও পদক্ষেপ না করার কথা বলতে পারে? জবাবে আজ বুধবার কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, তারা রাজ্যগুলোকে বলতে পারে, পুলিশ সুপার (এসপি) বা তার চেয়ে উঁচু পদমর্যাদার কর্মকর্তারাই যেন কেবল রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আজ সাফ জানিয়ে দেয়, যত দিন না কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ‘পুনর্বিবেচনা’ শেষ করছে, ততদিন এই আইনের প্রয়োগ স্থগিত থাকবে।
প্রধান বিচারপতি এনভি রামানার নেতৃত্বাধীন বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি হিমা কোহলির সমন্বিত বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই আইনের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আবেদনকারীরা এরআগে দাবি করেছিলেন এই আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি অ্যাটর্নি জেনারেলও উল্লেখ করেছেন যে, হনুমান চালিসা মামলাতেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিষয়টি আরোপ করা হয়েছে। সেজন্য পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত এই আইন প্রয়োগ স্থগিতই থাকবে।
শীর্ষ আদালত আরও জানিয়েছে, এই আইন ব্যবহার করে আর কাউকেই গ্রেফতার করা যাবে না। একইসঙ্গে এই আইন প্রয়োগ করে যে সমস্ত মামলা চলছে সেগুলোও আপাতত স্থগিত রাখা হবে। এই আইনের ফলে জেলে থাকা বন্দিরাও জামিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছে আদালত। আজ সুপ্রিম কোর্ট জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আইন স্থগিত থাকবে। তা সত্ত্বেও যদি এই আইনে কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় তাহলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্র আজ বলেন, ‘আজ সত্যিই একটা ঐতিহাসিক দিন। ১২৪-এ ধারা সম্বলিত আইনটা ব্রিটিশরা ভারতীয়দের দমন করার জন্য করেছিল। এটা কোনো ভারতীয় সরকারের ভারতীয়দের ওপরে চাবুক চালানোর জন্য মোটেও হয়নি। একদম শেষ মুহূর্তে গত পরশুদিন কেন্দ্রীয় সরকার এটা নিয়ে দেরি করার প্রচেষ্টায় গিয়ে বলেছিল, ‘ আমরা এটা আবার পুর্নবিবেচনা করব’। এটা সুপ্রিম কোর্ট বুঝে নিয়ে বলেছে, যে তোমরা পুর্নবিবেচনা করো কিন্তু যতক্ষণ না করছ এটা ততদিন এই আইনটা থাকতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা ও কোলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী সুখেন্দু শেখর রায় এমপি বলেন, ‘১৬২ বছর পরে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই রায় নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। যদিও এই আইনটা পুরোপুরি বাতিল করে দিলেই ভালো হতো। তবুও সরকারকে একটা সুযোগ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট যে তারা যেন এই আইন পুনর্বিবেচনা করে তা বাতিলের পথে এগোয়।
এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহ আইন সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হলে সেটা দেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক পদক্ষেপ হবে। আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ভারতবর্ষকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য ভারতবর্ষের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখবার জন্য, একটি কঠোর ও কঠিন আইনের প্রয়োজন আছে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার তারা বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু দল হিসেবে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে, অখণ্ডতার স্বার্থে, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে উপড়ে ফেলতে একটি শক্তিশালী ও কঠোর আইনের প্রয়োজন আছে।’
এ প্রসঙ্গে ওই আইনের বিরুদ্ধে অন্যতম মামলাকারী তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্র আজ বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের লড়াই আজ স্বীকৃতি পেল। সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে এই রায় প্রদানের জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’ আশা করছি, কেন্দ্রীয় সরকার যথোপযুক্ত পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে ওই আইনের বিলোপ ঘটাবে বলেও মহুয়া মৈত্র এমপি মন্তব্য করেছেন। খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে