২০২৪-এর নির্বাচনে কংগ্রেসের জীবন দান! আট ফর্মুলা দিলেন প্রশান্ত কিশোর

২০১৪-তে কেন্দ্রে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে একের পর নির্বাচনে পরাজয়। হিসেব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ৯০ শতাংশ নির্বাচনে পরাস্ত হয়েছে কংগ্রেস (congress)। যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। দিন কয়েক আগে প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) সনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি ২০২৪-এর নির্বাচনে কংগ্রেসের জীবন দান নিয়ে কিছু প্রস্তাব করেন বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, কংগ্রেসের তরফে সেই প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসকে যে ফর্মুলা দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে ৫৪৩ টি আসন নয়, ৩৭০ টি আসন ধরে লড়াইয়ে নামতে হবে। কেননা ৩৭০ টি আসনে কংগ্রেস আগে থেকেই শক্তিশালী। এই আসনগুলিতে এনডিএ কিংবা বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াই হতে পারে। এই টার্গেট রেখে এগোলে তারা ভাল ফল করতে পারে। বাকি ১৭০ থেকে ১৮০ টি আসন বিভিন্ন রাজ্যে জোট সঙ্গীদের জন্য ছেড়ে রাখার প্রস্তাব করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

বেশ কয়েকটি রাজ্যে জোট না করে একা লড়াইয়ের প্রস্তাব প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসকে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, পঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, ছত্তিশগড়। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে হারানো রাজনৈতিক ভিত্তি ফিরিয়ে আনতে কংগ্রেসকে একা লড়াইয়ের ফর্মুলা প্রশান্ত কিশোর দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

প্রশান্ত কিশোর বেশ কয়েকটি রাজ্যে কংগ্রেসকে জোট করে লড়াইয়ের ফর্মুলা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এইসব রাজ্যে আঞ্চলিক দল বেশ শক্তিশালী। যেসব রাজ্যগুলির কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে তালিমনাড়ুতে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে ডিএমকের জোট রয়েছে। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা এবং এনসিপির সঙ্গে কংগ্রেসের জোট রয়েছে। আর বাংলায় প্রশান্ত কিশোর বামেদের পরিবর্তনে কংগ্রেসকে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কেননা বাংলায় বামেদের থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েক তৃণমূল শক্তিশালী।

প্রশান্ত কিশোরের ফর্মুলায় দেশের সব বিরোধী দলের সঙ্গে কংগ্রেসের ভাল সমন্বয় তৈরির কথা বলা হয়েছে। সব বিরোধীর সঙ্গে জোট না করে ফল বেরনোর পরের বিকল্প হিসেবে রাখা উচিত। প্রসঙ্গত প্রশান্ত কিশোর সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন, বিজেপিকে পরাস্ত করতে কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে বিরোধী ঐক্য জোরদার করতে হবে। এছাড়াও ২০২৪-এর নির্বাচনে ভাল ফল করতে গেলে তার আগে যেসব রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে, সেইসব রাজ্যে ভাল ফল করতে হবে।

বিজেপি উগ্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। সেই পরিস্থিতিতে বিজেপিকে পরাস্ত করতে কংগ্রেসকেও কিছু একটা করতে হবে। সেই জায়গায় কংগ্রেসকে তাদের নিজের মতো করে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা উপস্থাপনের ফর্মুলা তিনি দিয়েছেন, যেখানে বিজেপির উগ্র জাতীয়তাবাদকে প্রতিহত করা যায়।
পাশাপাশি হিন্দুত্ব ইস্যুতেও পরিকল্পনা করতে হবে। প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, দেশের ৫০ শতাংশ হিন্দু বিজেপির সঙ্গে থাকলেও বাকি ৫০ শতাংশ তাদের সঙ্গে নেই। এঁদের সবাইকে একসঙ্গে করে কংগ্রেসের গায়ে পড়ে যাওয়া হিন্দুত্ব বিরোধী ন্যারেটিভ ভাঙতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির সরকার গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছে। গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বিজেপির জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যএাজনা, উজ্জ্বলা যোজনা, জনধন, মুদ্রা যোজনা, কিষাণ সম্মান নিধি, বিনামূল্যে রেশন। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসকে এর বিকল্প তৈরি করে সাধারণ মানুষের সামনে রাখতে হবে।

প্রশান্ত কিশোরের অন্যতম ফর্মুলা হল কংগ্রেসের কাঠামো পরিবর্তন করা। তৃণমূলস্তর থেকে সংগঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি সবসময়ের সভাপতিকে দায়িত্ব নিতে হবে। যেসব রাজ্যে সরাসরি বিজেপির সঙ্গে লড়াই, সেসব রাজ্যে এব্যাপারে নজর দিতে হবে। তৃণমূলস্তর থেকে দল গঠনের জন্য কংগ্রেসে ইতিমধ্যেই একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

জনগণের কাছে পৌঁছে যাওয়ার যোগাযোগের কাঠামো পরিবর্তনের কথা প্রশান্ত কিশোর বলেছেন বলে জানা গিয়েছে। কংগ্রেসের বার্তা খুব ভালভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে তাদের যোগাযোগ বিভাগের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন প্রশান্ত কিশোর। কীভাবে কংগ্রেসের এই বিভাগকে উন্নত করা যায় এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সব মিডিয়ার কাছে পৌঁছে যাওয়া যা, তা নিয়ে ফর্মুলা প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসকে দিয়েছেন।

news