ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনের পর দেশের মানুষের ভয় কেটে গেছে। নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে মানুষ এখন আর ভয় পায় না। সংবিধান, ধর্ম ও বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোর ওপর আক্রমণও মানুষ আর বরদাশত করছে না।

আমেরিকা সফররত রাহুল গান্ধী গতকাল (রোববার) ডালাসে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের এক সমাবেশে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, "বিজেপির আদর্শ বাঁধা আরএসএসের কাছে, যারা বিশ্বাস করে, ভারত মানে এক আদর্শ। কিন্তু কংগ্রেসের চিরায়ত বিশ্বাস, ভারত বহু মত, বহু আদর্শের সমাহার। কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি-আরএসএসের লড়াই এ নিয়েই। বহুত্ববাদ বনাম একদর্শী মতবাদ। এটা বিচারধারার লড়াই।"

রাহুল গান্ধী বলেন, "লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর যখন দেখা গেল বিজেপি সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় গরিষ্ঠতা পায়নি, সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপিকে ভয় পাওয়া উধাও হয়ে গেল। এর কৃতিত্ব দেশের জনগণের। ফল প্রকাশের পরেই মানুষ ঠিক করে ফেলে, তারা বিজেপিকে ভয় পাবে না। প্রধানমন্ত্রীকে ভয় পাবে না। সংবিধানের ওপর আক্রমণ মেনে নেবে না।"

ভারতে শ্রমবাজারে নারীর উপস্থিতি এত কম কেন- এ প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, "আরএসএস-বিজেপির অনুসৃত নীতি এ জন্য অনেকটাই দায়ী। হিন্দুত্ববাদী ওই সংগঠন ও দল মনে করে, নারীদের ভূমিকা সীমাবদ্ধ থাকা উচিত সংসারে। তাঁরা ঘরে থাকবেন। রান্নাবান্না করবেন। সন্তান লালন–পালন করবেন। কিন্তু কংগ্রেস মনে করে, পুরুষদের মতো নারীরাও সমানভাবে এগোবেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী হবেন। নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করবেন। লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে চলবেন। বিজেপির এ মনোভাবই শ্রমবাজারে নারী উপস্থিতি কমের কারণ।"

রাহুল আরও বলেন, "কংগ্রেস বিশ্বাস করে, জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রত্যেকের অংশগ্রহণের সমান অধিকার আছে। স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে সবার। জাত, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, পরম্পরা বা ইতিহাসনির্বিশেষে প্রত্যেকের সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের লড়াই। লোকসভা নির্বাচনের পর এই লড়াই জোরালো হয়েছে। মানুষ বুঝেছে, বিজেপি এটা চায় না বলেই তারা ক্রমাগত সংবিধানকে আক্রমণ করে চলেছে।"

বিরোধী নেতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা কী, জানতে চাওয়া হলে রাহুল বলেন, "আমার কাজ রাজনীতিতে ভালোবাসা, সম্মান ও বিনম্রতা ফিরিয়ে আনা। দেশের রাজনীতি থেকে ক্রমেই এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ভারত জোড়ো যাত্রায় সারাক্ষণ আমি এই ভালোবাসার কথাই বলেছি। ঘৃণার জবাবে ভালোবাসা।"

ভারতে কর্মসংস্থানের সমস্যা কেন এত প্রবল, সে বিষয়ে রাহুলের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন,"একসময় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ছিল উৎপাদনের কেন্দ্র। ক্রমেই জাপান, কোরিয়া সেদিকে নজর দেয়। এখন তার বেশিটা চলে গেছে চীনে। তারাই উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত তা চীনের হাতে তুলে দিয়েছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে গেলে উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। শুধু মুখে বললে হবে না। তা হলে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশিদের কাছে তা একচেটিয়া হয়ে যাবে।"

দক্ষতাকে সম্মান দিয়ে উৎপাদনের দিকে এগোলে ভারতও চীনের মোকাবিলা করতে পারবে বলে রাহুল মন্তব্য করেন।

পার্সটুডে

news