তাঁকে নিয়ে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছে। বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছে ভারতকে। এর মধ্যেই আবার আলোচনায় খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন। এবার ভারতের এয়ারলাইনস এয়ার ইন্ডিয়াকে সরাসরি হুমকি দিলেন তিনি। এই নেতা বলেন, আগামী ১ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত যেকোনো সময় এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে হামলা হতে পারে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, সোমবার এমনই হুমকি দিয়েছেন পান্নুন। এ সময় তিনি আকাশপথের যাত্রীদের সতর্ক করে বলেন, আগামী ১ থেকে ১৯ নভেম্বর আকাশপথে যাত্রার ক্ষেত্রে এয়ার ইন্ডিয়া এড়িয়ে চলবেন। 

শিখ গণহত্যা দিবস সামনে রেখে এই হুমকি দিলেন পান্নুন। গত বছরও একই সময় এমন হুমকি দেন তিনি। এ ছাড়া গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন আমেরিকায় বসবাসকারী এই শিখ নেতা। তবে একবারও হামলা হয়নি। 

আমেরিকা ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক গুরপতবন্ত সিং পান্নুন নিউইয়র্ক ভিত্তিক এক আইনজীবী। তিনি ‘শিখস ফর জাস্টিস’ নামের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। একসময় তিনি এই সংগঠনের মুখপাত্রও ছিলেন। 

এবার এমন এক সময়ে পান্নুন এই হুমকি দিলেন, যখন ভারতের বিভিন্ন ফ্লাইটে শতাধিক বোমা হামলার হুমকি এসেছে। যদিও একবারও হামলা হয়নি। এ ছাড়া খালিস্তানপন্থী আরেক শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারত ও কানাডার মধ্যে আবারও উত্তেজনা শুরু হয়েছে।

গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে ভারত ২০২০ সালে দিল্লি তাঁকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করে। প্রায় দুই ডজনের মামলায় তিনি ভারতের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার একজন, যার মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও আছে। এমনকি গত সেপ্টেম্বরে অমৃতসর ও চণ্ডীগড়ে তাঁর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার।

পান্নুন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠানো ভারত সরকারের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি কেবল খালিস্তানে বিশ্বাস করা একজন অধিকারকর্মী মাত্র।

১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে ভারত নিষ্ঠুরভাবে শিখ বিদ্রোহ দমন করেছিলো। যদিও শিখদের একটি অংশ এখনও খালিস্তান প্রচারণায় চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে) প্রচারণার সক্রিয় সমর্থক পান্নুন। ২০০৭ সালে এসএফজে গঠন করা হয়েছিলো মূলত ১৯৮৪ সালে ভারতে ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত শিখদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে।

পাঞ্জাবের নাথু চাক গ্রামে জন্ম পান্নুনের। পরবর্তীতে তাঁর পরিবার অমৃতসরের খানকোত গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে।  লুধিয়ানার স্কুলে পড়ার পর নব্বইয়ের দশকে চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ওই সময়ে পান্নুন ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন বলে পাঞ্জাব পুলিশের সাবেক একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এর অনেক বছর পর তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখানে ব্যবস্থাপনা ও আইনে ডিগ্রি নেওয়ার পর বিজনেস কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। 

পান্নুন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেন ২০২১ সালের পর। কারণ, পরিচিত ভারতীয় রাজনীতিকরা আমেরিকা সফর করলেই তাদের বিরুদ্ধে পান্নুনের সংগঠন শিখদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দাঙ্গায় ভূমিকা রাখার অভিযোগ এনে মামলা করতে শুরু করে। তিনি ১৭৮৯ সালের একটি আইনের ওপর ভিত্তি করে মামলাগুলো করছিলেন। ওই আইনে বলা আছে বিশ্বের যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হোক না কেন, আমেরিকার আদালতে তার বিচার হতে পারে।

এসব মামলা পান্নুকে আলোচনায় নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে তাঁর ভারত বিরোধী প্রচারণাও জোরদার হয়। ওই বছরই খালিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য শিখদের বৈশ্বিক গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখরা ভোটে অংশ নেয়।

news