১৬ বছর পর আবারও চালু হচ্ছে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা চালু হওয়ায় এই বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে—ভোটের আগেই, চলতি বছরের ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এই পরীক্ষা হবে।

এর আগেও ২০২২ সালে এই পরীক্ষা চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা বাস্তব হয়নি। সেই সময় দেশের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক জানিয়েছিলেন—পুরোনো এই পরীক্ষাটি চালু করলে শিশুদের উপর মানসিক চাপ বাড়বে এবং সমাজে ধনী-গরিব বৈষম্য আরও স্পষ্ট হবে

আজকের বাস্তবতায়ও প্রশ্ন উঠছে—শুধু সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষা, এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? একের পর এক পরীক্ষার ফাঁদে ফেলে শিশুদের কোচিং নির্ভর বানিয়ে ফেলার বিরুদ্ধে বিশাল তর্ক রয়েছে। তবে অনেক অভিভাবক আবার মনে করেন, শিশুদের চাপ না দিলে তারা পড়ালেখা ভুলে যাবে। তাই এই তর্ক আপাতত তুলে রাখা যাক।

কিন্তু সিরাজগঞ্জের সাগর আর হাজীগঞ্জের কুসুমের মতো অনেক ছাত্রছাত্রী আজ মন খারাপ করে বসে আছে। কারণ তারা জানে না, একই দেশে থেকে তারা কেন বঞ্চিত হবে বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে? যদি পরীক্ষা নিতেই হয়, তবে কেন সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না?

গত ১৭ জুলাই ২০২৫, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে—এই বৃত্তি পরীক্ষায় কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, রেজিস্টারভুক্ত স্বতন্ত্র বিদ্যালয় ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নিতে পারবে। বেসরকারি স্কুল, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা বাইরে থাকছে এই সুযোগ থেকে।

এমনকি সরকারি স্কুলেও সব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে না। শুধুমাত্র ৫ম শ্রেণির সেরা ৪০% শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবে। উদাহরণ হিসেবে, যদি কোনো স্কুলে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকে, তবে মাত্র ৪০ জন পরীক্ষায় বসতে পারবে। আবার ৫০ জন থাকলে, ২০ জন।

আর এই ৪০ শতাংশ নির্বাচন করতে হবে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। তাদের নাম পাঠাতে হবে নির্ধারিত ফরমে। নিয়ম ভাঙলে শ্রেণিশিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হলো—এতসব নিয়মের ভিড়ে কোথায় গেল শিক্ষায় সমতার নীতি?

দেশে যেখানে ৯৭% মাধ্যমিক স্কুল বেসরকারি, সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে এতটা বৈষম্য কেন? যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারই স্বীকৃতি দিয়েছে, সরকারি বই দিয়েছে, তারাই যদি বাদ পড়ে যায়, তবে এটা কি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিভক্ত করার আয়োজন নয়?

এমন সময়ে আবার অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার কথাও উঠছে, যেখানে একই রকমভাবে বৈষম্যের শঙ্কা আছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অসন্তোষ বাড়ছে। অনেকেই মানববন্ধন করছে, সংবাদ সম্মেলন করছে। ২৩ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে—দেশে ৫০ হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন স্কুল এই বৈষম্য মানবে না।

তাদের প্রশ্ন একটাই—একই কারিকুলাম, এক সিলেবাস, এক বই দিয়ে পড়ানো হচ্ছে, তবুও কেন বঞ্চিত হবে এত শিক্ষার্থী?

এভাবে চলতে থাকলে কেউ কেউ শিশুদের আন্দোলনে নামিয়ে দিতে পারে—এটা দেশবাসী চায় না। তাই সময় এসেছে, একটা ন্যায়সঙ্গত সমাধান খুঁজে বের করার

সবার জন্য সমান সুযোগ রাখা গেলে বঞ্চনা কমবে। পরীক্ষার সুযোগ থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে বাদ না দিলেই বরং শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়বে

news