দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭,৫১৭ শিক্ষার্থী এবার ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছেন। দীর্ঘ সময়ের বিরতির পর নির্বাচন উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আনন্দ ও উদ্দীপনা।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে ভোটগ্রহণ চলবে। তফশিল ঘোষণার পর প্রার্থীরা শাটল ট্রেন, একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।

নির্বাচন উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার ও ইশতেহারে সেজেছে। এতে ছাত্র ১৬,০৮৪ এবং ছাত্রী ১১,৪৩৪ সহ মোট ২৭,৫১৭ ভোটার অংশগ্রহণ করছেন।

চাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে ৯০৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চাকসুতে ২৬টি পদে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৯৩ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে ৪৮ নারী ও ৩৬৬ পুরুষ প্রার্থী লড়ছেন। এছাড়া, ২৪ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

চাকসুতে ভাইস প্রেসিডেন্টে ২৪, জিএস-এ ২২, এজিএস-এ ২১ প্রার্থী লড়ছেন। হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদের ৯টি হল ও একটি হোস্টেল থেকে মোট ৩৫০ জন, ছাত্রীদের ৫টি হল থেকে ১২৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটারদের কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি ভোট দিতে হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি এবং হল সংসদের ১৪টি। ভোট দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ ১০ মিনিট, অর্থাৎ প্রতি ২০ সেকেন্ডে একজন শিক্ষার্থীকে একটি করে ভোট দিতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোটাররা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

ভোট হবে ব্যালট পেপারে এবং গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। ভোটারদের বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন,
“ভোটগ্রহণ শেষে গণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে, অ্যানালগ পদ্ধতিতে অনেক সময় লাগতো। গোপন কক্ষ ছাড়া সব কেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। ব্যালট পেপারে থাকবে ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড, যা ওএমআর মেশিনে শনাক্ত হবে।”

১৯৮৬ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের একক আধিপত্য ছিল। ১৯৮১ সালের চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ছাত্র শিবির। ১৯৯০ সালে সর্বদলীয় ঐক্য করে ১২টি ছাত্র সংগঠন জয়লাভ করে। এরপর ৩৫ বছর নির্বাচন হয়নি।

নিরাপত্তা মোতায়েন থাকবে ১,৭০০ জন সদস্য

ভোটের জন্য ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে পুরো এলাকা। পুলিশ, র‍্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা দল টহল দিচ্ছে। ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি মিলিয়ে প্রায় ১,৭০০ জন মোতায়েন থাকবেন।

র‍্যাব চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন,
“নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর ও স্বাভাবিক আছে। র‍্যাবের ৮টি টিম ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছে। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।”

 

news