দেশের স্কুলগুলোতে এক অভিনব উদ্যোগ—ডিবিএল সিরামিকস বিনামূল্যে বিতরণ করেছে পরিবেশবান্ধব ‘টাইলচক’। দেশের ১০০০-রও বেশি স্কুলে এই বিশেষ চক পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা একদিকে শিক্ষা খাতে সহায়ক, অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষায় দিচ্ছে নতুন দৃষ্টান্ত।
একসময় ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার একমাত্র উপকরণ ছিল সাধারণ চক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিকভিত্তিক হোয়াইটবোর্ড ও মার্কার। অথচ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম প্লাস্টিক দূষণকারী দেশ—যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি।
এই বাস্তবতাতেই নতুন চিন্তা নিয়ে আসে ডিবিএল সিরামিকস। টাইলস উৎপাদনের সময় কারখানার পানি শোধনাগার থেকে যে বর্জ্য বা স্লাজ তৈরি হয়, সেটিকে অনেক দিন ধরেই কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে বোঝা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু কোম্পানির গবেষণা ও উপকরণ উন্নয়ন (RMD) টিম আবিষ্কার করে, এই স্লাজে রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম কার্বোনেট—যা দিয়ে মানসম্মত চক তৈরি সম্ভব।
প্রায় ছয় মাসের গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় ডিবিএল সিরামিকস প্রথমবারের মতো এই বর্জ্য থেকেই তৈরি করে পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও টেকসই চক—‘টাইলচক’। শুধু গবেষণায় থেমে না থেকে, তারা স্থানীয় চক উৎপাদনকারীদের সঙ্গে মিলে প্রায় ১০,০০০ প্যাকেট চক তৈরি করে এবং ভাঙা টাইলস দিয়ে বানায় টেকসই স্লেট।
এরপর এই চক ও স্লেট বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় দেশের ১০০০-রও বেশি স্কুল ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য উৎপাদনকারীদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হয় ‘টাইলচক’ তৈরির ফর্মুলা—যাতে আরও প্রতিষ্ঠান বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে পারে।
এই উদ্যোগ ইতোমধ্যেই দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে একদিকে আমদানি নির্ভরতা কমেছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপও হ্রাস পেয়েছে। কৃষিজমি রক্ষা পাচ্ছে, আর প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে পরিবেশবান্ধব এই চক।
শিক্ষাক্ষেত্র ও শিল্পখাতে টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে ডিবিএল সিরামিকসের ‘টাইলচক’ এখন স্কুল, এনজিও ও গণমাধ্যমে প্রশংসিত একটি উদাহরণ। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাস—“শিক্ষা কখনোই পরিবেশের ক্ষতির কারণ হতে পারে না।”
