ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজন নেই: ওয়াইসি

ভারতের মজলিশ-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি হিন্দুত্ববাদী বিজেপিকে টার্গেট করে বলেছেন, যেখানেই বিজেপির সরকার আছে, সেখানে আইনের শাসন নেই।  রোববার হিন্দি গণমাধ্যম ‘আজতক’-এ তার ওই মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। 

ওয়াইসি বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোকে টার্গেট করে বলেন, প্রত্যেকটি রাজ্যে ‘বুলডোজার’ দিয়ে শাসন চলছে। এটা মুসলমানদের জন্য ঠিক নয়। এ ধরনের পরিবেশ দেশের জন্য সংবিধান ও বিচার বিভাগের জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কিছু কথা বলা উচিত।

বহুলালোচিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’  কার্যকরের দাবি প্রসঙ্গে ওয়াইসি  বলেন, দেশে এর প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, যদি একজন হিন্দু গোয়াতে বিয়ে করেন এবং তার স্ত্রীর বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হয় তবে তিনি পুনরায় বিয়ে করতে পারেন। গোয়ায় বিজেপির সরকার রয়েছে, কিন্তু  সেখানে বিজেপির লোকেরা ওই বিষয়ে কিছু বলে না।  

ভারতে একাধিক বিজেপিশাসিত রাজ্যে বিজেপি নেতারা ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ কার্যকর করার দাবি তুলেছেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, আমাদের দলের কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ ধারা, রাম জন্মভূমি, তিন তালাক এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)- এর মতো বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান করেছে। কমন সিভিল কোডের মতো যা বাকি আছে তাও আগামী বছরগুলোতে সমাধান করা হবে।  

গণমাধ্যমে প্রকাশ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওয়াইসি বলেন, ‘আমরা ইউনিফর্ম সিভিল কোডের বিরুদ্ধে। আইন কমিশন নিজেই বলেছে যে ভারতে 'ইউনিফর্ম সিভিল কোড'-এর প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রীয় সরকার কেন অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে না? দেশের অর্থনীতি থমকে গেছে, বেকারত্ব বাড়ছে। মুদ্রাস্ফীতিও বাড়ছে এবং আপনি ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ নিয়ে চিন্তিত।’  

প্রসঙ্গত, গোয়া সিভিল কোড  একটি ইউনিফর্ম সিভিল কোড নয়। ১৮৬৭ সালের উপর ভিত্তি করে তৈরি এটি পর্তুগিজ সিভিল কোড এবং এটি সারা দেশে বৈধ নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশ, ওই বিধি অনুসারে, হিন্দু পুরুষদের বিশেষ পরিস্থিতিতে দু’টি বিয়ে করার অনুমতি আছে। যদি স্ত্রী ২৫বছর   বয়সের মধ্যে সন্তান ধারণ করতে সক্ষম না হয় তবে পুরুষটি আবার বিয়ে করতে পারে। শুধু তাই নয়, গোয়ার সিভিল কোড অনুসারে, স্ত্রী যদি ৩০ বছর পর্যন্ত পুত্রের মা হতে না পারেন, তবে স্বামীকে পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধিতাকারীদের মতে এর প্রয়োগ জনগণকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে বঞ্চিত করবে এবং তাদের তা মানার অধিকার কেড়ে নেবে। কারণ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি  কার্যকর হলে বিবাহ, সম্পত্তি, সন্তান এবং উত্তরাধিকারের মতো বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ছাড়ের  অবসান ঘটবে এবং প্রত্যেক ধর্মের জন্য একটি আইন হবে।

অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’  কার্যকর হলে  বিয়ে, তালাক ও সম্পত্তির ক্ষেত্রে সব ধর্মের জন্য একই আইন প্রযোজ্য হবে। এবং প্রত্যেক ধর্মের জন্য একটি অভিন্ন আইন থাকবে। বর্তমানে, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং পার্সিদের জন্য পৃথক ব্যক্তিগত আইন রয়েছে। মুসলিমরা এক্ষেত্রে শরীয়াহ আইন অনুসরণ করে।  যেখানে হিন্দু, শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধরা হিন্দু সিভিল কোডের অধীনে তাদের বিষয় নিষ্পত্তি করে। 

news