ভারতের পশ্চিমবাংলায় মমতার পর মুখ্যমন্ত্রী অভিষেকই
রাজ্যে-রাজ্যে বংশ পরম্পরায় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার বহু উদাহরণ রয়েছে।
দলনেত্রীর অভিভাবকত্বে অভিষেকই যে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন দলেরই একাংশ।
দলের রাজ্য জয়ের বর্ষপূর্তিতে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পর অপরূপা পোদ্দার, তারপর মদন মিত্র। প্রত্যেকের বক্তব্যের প্রধান অভিমুখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর কে হবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। দলনেত্রীর অভিভাবকত্বে অভিষেকই যে মুখ্যমন্ত্রী তা স্পষ্ট করেছেন দলের একাংশ। শুধুই কি তাই, কেন আগাম ঘোষণা, তা নিয়েই সরগরম বাংলার রাজনৈতিক মহল।
বংশ পরম্পরায় কংগ্রেস, উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিং যাদবের ছেলে অখিলেশ, তামিলনাড়ুতে করুনানিধির ছেলে স্টালিন, বিহারে লালুপ্রসাদের ছেলে তেজস্বী, মহারাষ্ট্রে বাল ঠাকরের পুত্র উদ্ভব এমন হাজারো উদাহরণ রয়েছে ভারতীয় রাজনীতিতে যেখানে বংশসূত্রে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন বা দলের হাল ধরেছেন। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখানে মাঝে-মধ্যেই দলের তরফে অভিষেক-মমতাকে নিয়ে পৃথক মতামত রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে। কে কার অনুগামী তা নিয়েও বিতর্ক চলতে থাকে প্রকাশ্যে। এবার চর্চা শুরু তৃণমূলের ভবিষ্যৎ মুখ্যমন্ত্রী কে তা নিয়ে।
প্রথমত কুণাল ঘোষের সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট অনুযায়ী ২০৩৬ অবধি বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের মুখপাত্র যদি এই ঘোষণা করেন, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন তাহলে কী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম দাবিদার থাকছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অথচ দলীয় সাংসদ অপরূপা পোদ্দার বলছেন, ২০২৪-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী, আর অভিষেক তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। একধাপ এগিয়ে বিধায়ক মদন মিত্র বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখনই চাইবেন তখনই মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক। অভিজ্ঞ মহলের মতে, অন্য বিতর্ক যাই থাকুক মোদ্দা কথা সকলের অভিমুখ কিন্তু এক। আগে-পরে বিষয় নয়। দলে মমতার পরেই যে অভিষেক তা মনে করিয়ে দেওয়া।
এর আগে যখন ডায়মন্ডহারবার মডেল নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত হিসাবে বক্তব্য রেখেছিলেন সাংসদ তথা দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তখন রেরে করে তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন প্রবীণ সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়। চরম বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। কেউ বলছেন আমার নেত্রী মমতা, কেউ বলছেন অভিষেক। নেত্রীর পরিবারের বাইরে যে অন্য কাউকে দলের কেউ মেনে নেবেন তা তা বারে বারে স্পষ্ট হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী ‘প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী’ বলে অজুহাত তুলে দল ছেড়েছিলেন।
তার আগে তিনিও তিন-তিনটে দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। একাধিক সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঝাঁকে ঝাঁকে বিদ্রোহ করে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, কিন্তু যাঁরা থেকে গিয়েছেন তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই লড়াই করেছিলেন। অভিষেক ও আই প্যাক ওই নির্বাচনে রণকৌশলের অন্যতম মূল কারিগর ছিলেন, একথা জানে রাজনৈতিক মহল। তবু পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক, একথা ফলাও করে বলতে হচ্ছে দলের একাংশকে।
প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহার সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর সুসম্পর্ক ছিলই। যখন বিজেপিতে থেকে দলের তীব্র বিরোধিতা করছিলেন শত্রুঘ্ন তখন তৃণমূলের আরও কাছাকাছি আসেন তিনি। গত ২১ জুলাই তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা চাউড় হয়েছিল। এবছর তিনি আসানসোল কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে সাংসদ হয়েছেন। রাজনীতিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি করার রেওয়াজ রয়েছে বরাবরই।
এখনও যাদের বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেখানেও পরিস্থিতি তৈরি করার তীব্র প্রচেষ্টা বিদ্যমান। তাতে ঢাক গুরগুরও নেই। ২০২১ বিধানসভার পর যাঁরা বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরেছেন, তা অনেকে কল্পনা করতে পারেননি। যোগ দেওয়ার আগেই খবর ছড়িয়ে যাচ্ছিল অমুকের ঘরওয়াপসি শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখন এই বিষয়টা একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। বিষয়টাকে বিতর্ক এড়িয়ে মসৃণ করার একটা তাগিদ থাকেই।