অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে বেশ কিছু সংকট মোকাবিলায় ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ভোটের রোডম্যাপ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের দাবিতে আবারও সোচ্চার হচ্ছে দেশের মানুষ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলোর মধ্যে গত ছয় মাসে অনৈক্যের সুর প্রকট হয়ে উঠেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঐক্যের ডাকে রাজনৈতিক দলগুলো প্রথমে ইতিবাচক সাড়া দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে অনৈক্য ও হানাহানির প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক এখন তিক্ততম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানালেও জামায়াত আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের এই দ্বন্দ্ব তাদের সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুটি সংগঠন। এছাড়াও, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের পার্থক্য ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেশের জন্য অশুভ সংকেত। তারা সতর্ক করেছেন, এই অনৈক্য চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে এবং বিরোধী শক্তিগুলোকে উৎসাহিত করতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক শীতল হওয়ার পেছনে নিয়োগ-পদায়ন ও সংস্কার নিয়ে মতপার্থক্য দায়ী। বিএনপি ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও জামায়াত প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছে। এই বিরোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, বিশেষ করে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই তাদের মধ্যে মেরুকরণ বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা এবং একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনৈক্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও সংলাপের মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।


