শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রায় আরও ৫০টি শ্রেণিকক্ষ সংযুক্ত হলো। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি তহবিল থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চাশটি শ্রেণি কক্ষ ডিজিটাইজ করার লক্ষ্যে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের জন্য একটি করে মাল্টিমিডিয়া এনড্রয়েড টিভি একটি করে ট্যাব, ডিজিটাল কন্টেন্ট প্রদান করে। এই উপলক্ষ্যে আজ ঢাকায় সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২ জন শিক্ষককে টেলিযোগাযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং টেলিফোন শিল্প সংস্থার সহযোগিতায় বিএসসিসিএল-এর উদ্যোগে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রশিক্ষণের সমাপণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিটিআরসি‘র সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা তহবিল থেকে দেশের দুর্গম অঞ্চলের ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এই উপলক্ষ্যে আজ ঢাকায় টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের চেয়ে ভাল কাজ হতে পারে না। শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরে ১৯৮৭ সাল থেকে দীর্ঘ পথচলায় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখী হয়েও শিশু শিক্ষার জন্য সফটওয়্যার বানিয়েছি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বারবার ব্যর্থ হয়েছি। তিনি বলেন, শিক্ষায় কম্পিউটার ব্যবহার ধারণাটা আমার আবিস্কার নয়। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কম্পিউটার ব্যবহার করে পাঠদান করাটি আমাকে দেখায়। সেই ধারণাকে বাস্তবায়ন করার বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো আমাদের পাঠ্যবইকে ডিজিটাল উপাত্তে রূপান্তর করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল থেকে গত তের বছরে হাটি হাটি পা পা করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রম ডিজিটালে রূপান্তরে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বে এ ধরনের ডিজিটাল উপাত্ত তৈরি করা এটাই প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র।
করোনাকালে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জীবনযাত্র সচল রাখতে সরকার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আগামী সভ্যতা গড়ে উঠবে ডিজিটাল সংযুক্তির উপর। প্রচলিত শিক্ষা ডিজিটাল শিক্ষায় রূপান্তর না হলে কঠিন চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি আমাদের এগিয়ে যাওয়ার চালিকা শক্তি। করোনাকালে উন্নত দুনিয়ার তুলনায় আমাদের ভাল করার মূল মন্ত্রটি ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি। যে শিশুরা পড়তে চায় না তাদের আগ্রহ সৃষ্টিতে ডিজিটাল কন্টেন্টে পাঠ প্রদানের ফলপ্রসূ অবদান তুলে ধরে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, শিশুরা খেলার ছলে তাদের এক বছরের সিলেবাস ২ মাসের মধ্যে শেষ করতে সক্ষম। নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলায় একটি ডিজিটাল স্কুলের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতেই হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ সরবরাহের সাথে শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট অপরিহার্য় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সামনে রোবটিক্স, আইওটি, বিগডেটা, ব্লকচেইন ইত্যাদি নতুন প্রযুক্তি প্রসারের ফলে আগামী দিনগুলোতে প্রচলিত ধারার শিক্ষায় কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। তাই প্রযুক্তির বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর অপরিহার্য।
বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডিজিটাল কনটেন্ট বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজয় ডিজিটাল এর সিইও জেসমিন জুই। অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মশিউর রহমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্মসচিব রাশেদা ফেরদৌস এবং প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষে টিএন্ডটি স্কুলের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন বক্তৃতা করেন। টেশিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান হাবিব তফাদার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধে জেসমিন জুই শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের অন্যতম প্রধান উপকরণ হচ্ছে ডিজিটাল কনটেন্ট বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একটি ভাল কনটেন্ট শিশুদের ভাল বন্ধু। তারা খেলার ছলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এক বছরের পাঠ্যক্রম অনায়াসে দুই মাসে শেষ করতে সক্ষম। তিনি বলেন. উন্নত জাতি বিনির্মাণে মানসম্মত ডিজিটাল শিক্ষার জন্য মান সম্মত একটি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। গত তের বছরে বিজয় ডিজিটাল কনটেন্ট সে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে মাননীয় মন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বিবরণ শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন।
পরে মন্ত্রী প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন। এর আগে সকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো: খলিলুর রহমান দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।


