রমজান মাসে ফলের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পবিত্র রমজান শুরু হতে না হতেই মাল্টা, কমলা, আঙুর, তরমুজ, বেদানাসহ বিভিন্ন ফলের দাম এক সপ্তাহের মধ্যে কেজি প্রতি ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। এমনকি আনারসের দামও বেড়েছে। বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের মুখে হতাশার কথা শোনা গেছে। ফলের দাম ক্রমাগত বাড়ছে, যা নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজারে তদারকি না করলে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।
কিছু দিন আগে ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দামে পাওয়া মাল্টার দাম রোববার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোহাম্মদপুরের একটি বাসার দারোয়ান হেমকত আলী বাজারে ফল কিনতে গিয়ে জানান, ৩৫০ টাকার নিচে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না, আর ৩০০ টাকায় পাওয়া ফলও নিম্নমানের। এমন পরিস্থিতিতে তিনি আর ফল কেনার চিন্তা করেননি। রোজার ইফতারে ফল রাখার জন্য বাজারে গিয়েও দাম শুনে অনেক ক্রেতা হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
কৌশিক আহমেদ, একজন বেসরকারি চাকরিজীবী, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "রমজান শুরু হওয়ার পর থেকেই ফলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ২৭০-২৮০ টাকার মাল্টা এখন ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কমলা ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় উঠেছে।" তিনি জানান, এমন দাম বাড়ানোর কারণে তিনি ফল খাওয়ার জন্য আর কিছু কিনবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশি ফল ছাড়াও দেশি ফলের দামও বেড়েছে। মালিবাগ, পল্টন, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, মাত্র দুদিনে ফলের দাম ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপেলের কেজি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাল্টা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, কালো আঙুরের কেজি ৪৬০ টাকা, সবুজ আঙুরের কেজি ৩৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পাইকারি বিক্রেতারা জানান, আপেলের মৌসুম না হওয়া এবং মাল্টার সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম বেড়েছে। আবার রোজার জন্য কিছু ব্যবসায়ী বাড়তি দামে বিক্রি করার প্রবণতা দেখাচ্ছেন। তবে, বাংলাদেশের ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানিয়েছেন, বন্দরে কিছু জাহাজ আটকে যাওয়ার কারণে আমদানিকৃত ফলের দাম বেড়েছে, তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। শুল্ক কমানোর পর দাম কিছুটা কমে আসবে।
এছাড়া, দেশি ফলের দামও বেড়েছে। ডাবের দাম ২০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে, সাগরকলার দাম ১২০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না, আর পেঁপে ও পেয়ারার দামও বেড়েছে। এমনকি বেলের দামও ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন অভিযোগ করেন, রোজা এলেই কিছু ব্যবসায়ী অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে দেন, যা ব্যবসার নীতির পরিপন্থী। বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে এবং ব্যবসায়ীদের নৈতিকভাবে ব্যবসা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।


