আফ্রিকার মরক্কো সরকার এই বছর ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এটি রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য হচ্ছে। চলমান অর্থনৈতিক সংকট, দীর্ঘমেয়াদি খরা এবং কৃষিক্ষেত্রে দুর্দশার কারণে দেশটির পশুসম্পদের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরক্কোতে প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান ঈদে পশু কোরবানি করে থাকেন। কিন্তু এবার ২০২৫ সালের ঈদে এই প্রথা ভঙ্গ হচ্ছে। গত সাত বছর ধরে চলা মারাত্মক খরায় পশুর সংখ্যা প্রায় ৩৮ শতাংশ কমেছে, যার ফলে পশুর দাম বেড়েছে অবিশ্বাস্য হারে। গত বছর গড়পড়তা একটি ভেড়ার দাম ছিল প্রায় ৬০০ ডলার, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ের বাইরে।
দেশের ন্যূনতম মাসিক মজুরি মাত্র ৩৩৫ ডলার, যা কোরবানির পশু কেনার পক্ষে অপ্রতুল। এমন পরিস্থিতিতে রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষণা দিয়েছেন, এবার সাধারণ মানুষ কোরবানির পশু কোরবানি থেকে বিরত থাকবে এবং সরকার পক্ষ থেকে তা সম্পন্ন করা হবে।
১৯৬০-এর দশকের পর প্রথমবার এই ধরনের রাজকীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির কারণ হবে এবং অর্থনৈতিক চাপ কমাবে। তবে পশুপালকদের জন্য এটি বড় ক্ষতির কারণ।
সরকার খামারিদের সুরক্ষায় ৭০০ মিলিয়ন দিরহামের সহায়তা ঘোষণা করেছে, ঋণ মওকুফসহ গর্ভবতী পশুর নিবন্ধন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
ঈদকে ঘিরে স্বাভাবিক আমেজ এ বছর নেই, তবে অনেকেই রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ-এর সিদ্ধান্তকে মানবতা ও ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা হিসেবে দেখছেন। সামাজিক ভেদাভেদের মধ্যেও কিছু বিত্তবান গোপনে কোরবানি করছেন, আবার অনেকেই মাংস গরিবদের সঙ্গে ভাগ করে দিচ্ছেন। ফলে এই সংকট মরক্কোর সমাজে সমতার বার্তা দিচ্ছে।


