আগামী ১০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-বিরোধী জোটে যোগদানের চুক্তিতে সই করবেন। এটি হবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের হোয়াইট হাউজ সফর। খবর দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল মনিটর।

বাহরাইনে আয়োজিত মানামা ডায়ালগ সম্মেলনের এক ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত ও তুরস্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক সাংবাদিকদের জানান, “আমরা চাই সবাই এই জোটের অংশ হোক। এটা সিরিয়ার জন্যও এক বিশাল অগ্রগতি।”

২০১৪ সালে আইএস যখন সিরিয়া ও ইরাকজুড়ে তথাকথিত খেলাফত কায়েম করে, তখন এই জোটের জন্ম হয়। বর্তমানে ৮৮টি দেশ এই জোটে যুক্ত আছে। যদিও ২০১৯ সালে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) ও জোটের যৌথ অভিযানে আইএসের দখল ভেঙে যায়, তবে সংগঠনটির পুনরুত্থানের আশঙ্কা এখনো রয়ে গেছে।

একসময় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী জিহাদি কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন আহমেদ আল-শারা। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি বৈশ্বিক জিহাদ থেকে সরে এসে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকরা জানাচ্ছেন, গত এক দশক ধরে আইএস ও আল-কায়েদা নেতাদের অবস্থানসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপনে ভাগাভাগি করে আসছেন শারা।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির বিশ্লেষক অ্যারন জিলিন বলেন, “শারার এই সিদ্ধান্ত বহু বছরের নীতিগত পরিবর্তনের ফল। তিনি ২০১৩ সাল থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছেন।”

জিলিনের মতে, ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শারা ও তাঁর বাহিনী অন্তত ৭৫টি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়া পুনর্গঠনে ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে পাস হওয়া ‘সিজার সিরিয়া সিভিলিয়ান প্রোটেকশন অ্যাক্ট’-এর নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল থাকায় দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ কার্যত বন্ধ হয়ে আছে। এই কারণে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বেড়ে চলেছে, যা আইএসের পুনরুত্থানের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।

এদিকে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কারাগার ও শিবিরগুলোতে হাজারো বিদেশি যোদ্ধা ও তাদের পরিবার বন্দি। কুখ্যাত আল-হোল শিবিরকে সম্প্রতি এক আঞ্চলিক কর্মকর্তা ‘সম্ভাব্য টাইম বোমা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট জাতিসংঘকে এ শিবিরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

টম ব্যারাক জানান, যদি সিরিয়া আইএসবিরোধী চুক্তিতে সই করে এবং সিরিয়া-ইসরায়েল ও সিরিয়া-এসডিএফ সংঘাত প্রশমনে অগ্রগতি দেখাতে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ‘সিজার’ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিবেচনা করবে। এই প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট আইন এনডিএএর  সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই পাস হতে পারে।

সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক নাজিব গাধবিয়ান জানান, এতদিন সিরিয়ার জোটে যোগ না দেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এসডিএফকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়টি। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই সমস্যার সমাধান না হলে দামেস্ক ও কুর্দিদের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বাড়তে পারে।”

গাধবিয়ান আরও জানান, ১৯৭৪ সালের অস্ত্রবিরতি চুক্তির ভিত্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সমঝোতাতেও ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “আমাদের লক্ষ্য হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আরেকটি কূটনৈতিক বিজয়ের ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।”

 

news