ইতিহাস গড়ে সেমিতে মরক্কো: ইংল্যান্ডকে বিদায় করে শেষ চারে ফ্রান্স

কাতার বিশ্বকাপের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে এক গোলে হারিয়ে প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পা রাখলো মরক্কো।

শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় আল থুমামা স্টেডিয়ামে মাঠে নামে দু'দল। প্রথম থেকেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে পর্তুগাল ও মরক্কো। ম্যাচের ৪২ মিনিটে গোল করে মরক্কোকে এগিয়ে দেন এন-নেসিরি। তার দেয়া গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় মরক্কো। বিরতি থেকে ফিরে গোলের লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালায় পর্তুগাল। তবে শেষমেশ পর্তুগালকে সেই সুযোগ না দিয়ে গোল ইতিহাস গড়ে শেষ চারে পা রাখে মরক্কো।

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্নক খেলতে থাকে পর্তুগাল। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে ডান দিক থেকে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। ফ্রি কিক থেকে বাড়ানো বলে জোও ফেলিক্স হেড করলেও তা অসাধারণ সেভ দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বাউনু। এর পর ম্যাচের ৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে যায় মরক্কো। সেখান থেকে কর্নার পায় তারা। কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে হেড করেন ইউসুফ এনসার। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।

ম্যাচের ৩৪ মিনিটে বাম দিক থেকে বাড়ানো বলে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট করেন সেলিম আমাল্লাহ। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। ম্যাচের ৩৮ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে আবারও শট করেন ফেলিক্স। তবে আবারও তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। উল্টো ম্যাচের ৪২ মিনিটে গোলের দেখা পায় মরক্কো। বাম দিক থেকে বাড়ানো বলে লাফিয়ে উঠে হেড করে বল জালে জড়ান এন-নেসিরি। তার গোলে ম্যাচে লিড পায় মরক্কো। 


রোনাল্ডো
ম্যাচের পিছিয়ে পড়ে গোল শোধে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে পর্তুগাল। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেজের নেওয়া শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। এরপর আরও কিছু আক্রমণ করলেও গোল পেতে ব্যর্থ হয় তারা। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় মররক্কো।  

বিরতি থেকে ফিরেই কর্নার পায় পর্তুগাল। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৪৮ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে এগিয়ে যায় আশরাফ হাকিমি। ফাউলের স্বীকার হলে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। ফ্রি কিক থেকে সরাসরি পোস্টে শট করেন জিয়েচ। তবে তা রুখে দেন পর্তুগালের গোলরক্ষক ডিওগো কোস্টা।

গোলের আশায় আরও বেশ কিছু আক্রমণ করে পর্তুগাল। তবে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে এক গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মরক্কো। আর এতে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় মরক্কো। অন্যদিকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয় পর্তুগালকে। 


ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় উদযাপন করেছেন মরক্কোর খেলোয়াড়রা
কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগালকে হারিয়ে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করার পর ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় উদযাপন করেছেন মরক্কোর খেলোয়াড়রা।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, বিজয়ের পর মরক্কোর অনেক খেলোয়াড় তাদের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি পতাকা তুলে ধরেন। তারা এমনকি ম্যাচের পর তোলা গ্রুপ ছবিতেও ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শন করেন।

মরক্কোর স্ট্রাইকার আবদুল রাজ্জাক হামদাল্লাহ ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করেন এবং স্টেডিয়ামে ফ্যানদের সামনে তা প্রদর্শন করেন। দৃশ্যটি ছিল এমন যে, কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে মরক্কো জেতেনি বরং জিতেছে ফিলিস্তিন।

এর আগে গ্রুপ পর্বের খেলায় কানাডার বিরুদ্ধে এবং নক আউট পর্বে স্পেনের বিরুদ্ধে বিজয়ের পরও একইভাবে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন মরক্কোর ফুটবলাররা।

এদিকে, বিশ্বকাপের শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিতে পৌঁছে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় কাতারের আল-বাইত স্টেডিয়ামে ২০১৮ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মুখোমুখি হয় ইংলিশরা। ম্যাচের শুরু থেকে বল দখলের লড়াইয়ে দুই দল সমানে সমান থাকলেও শেষ হাসি হাসে এপবাপ্পে-জিরুডরা। তবে ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন যদি প্যানল্টি মিস না করতেন তাহলে হয়তো খেলার ফলাফল অন্যরকম হলেও হতে পারতো।

শুরু থেকেই ইউরোপের দুই পরাশক্তির দুর্দান্ত লড়াই উপভোগ করতে থাকে ফুটবলপ্রেমীরা। ম্যাচের ১২ মিনিটে প্রথম গোলের সুযোগ পায় ফ্রান্স। ডান পাশ থেকে ডেম্বেলের ক্রসে জিরুডের হেড সোজা চলে যায় ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ডের হাতে৷ জিরুডের আক্রমণের ঠিক ৪ মিনিট পরেই ১৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করে দলকে এগিয়ে দেন টিচুয়ামেনি। মাঝমাঠে গ্রিজম্যানের থেকে বল পেয়ে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে ডান পায়ের বুলেট গতির শটে গোল করে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন তিনি।

এক গোলে পিছিয়ে পড়ে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। ২৩ মিনিটে হ্যারি কেইন দারুণ শট নিলে সেটি রুখে দেন লরিস। ২৭ নিনিটে ম্যাচে উত্তেজনা ছড়ায় হ্যারি কেইনের পেনাল্টি আপিল। ভিএআর এর মাধ্যমে দেখা যায় ফাউলটি ডি বক্সের বাইরে হয়েছিল যার দরুণ পেনাল্টি বঞ্চিত হয় তারা। ৩০ মিনিটে আবারো হ্যারি কেইনের দূরপাল্লার বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন লরিস। ম্যাচের ৩৮ মিনিটে প্রথমবারের মত গোলের সুযোগ পান এমবাপে। ডিবক্সের ভেতর তার বা পায়ের শট চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে। প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময় শেষে ইংলিশদের বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।  

দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় সমতায় ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে ইংল্যান্ড। সেই সুবাদে ৫৪তম মিনিটে গোল পেয়ে যায় ইংলিশরা। ডান পাশ থেকে বল নিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন সাকা। ডি বক্সের ভেতর শট নিবেন এমন সময় তাকে ফাউল করে বসেন টিচুয়ামেনি। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। স্পট কিক থেকে গোল করে ইংল্যান্ডকে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফেরান স্পার্স অধিনায়ক হ্যারি কেইন।


হ্যারি কেইন
ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে ফের একবার এগিয়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। এ সময় অ্যান্তনি গ্রিজম্যানের নেয়া কর্নার কিক থেকে আসা বল হেড করে ইংল্যান্ডের জালে বল পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সের সবকালের সর্বোচ্চ গোলকারী ওলিভার জিরুড। ৮৪তম মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পায় ইংলিশরা। কিন্তু পেনাল্টি কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন দলনেতা হ্যারি কেইন। ফলে শেষ পর্যন্ত লিড ধরে রেখে ২-১ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে ফ্রান্স। সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ আফ্রিকার দেশ হিসেবে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা পাওয়া মরক্কো।
খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news