বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারে তিন দিনব্যাপী ‘খাঞ্জেলী মেলা’ শুরু হয়েছে শুক্রবার রাতে, যা চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই বছর মেলাটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, কারণ গত দু’বছর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটি আয়োজিত হয়নি। এবার হাজার হাজার ভক্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মাজার এলাকায় জড়ো হচ্ছেন, তাদের মনোবাসনা পূরণের আশায়।
শুক্রবার সকাল থেকেই মাজার এলাকায় ভক্তদের সমাগম শুরু হয়েছে। এই মেলা উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনের পাশাপাশি ভক্তরা দীঘিতে গোসল করে, মাজার জিয়ারত করে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, হযরত খানজাহান (রহ.) এখানে এসে দোয়া করলে তাদের সকল সমস্যা সমাধান হয় এবং তাদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
মেলা প্রাঙ্গণে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি, যেখানে একশটি দোকান বসেছে। ব্যবসায়ীরা সারা দেশ থেকে এসে তাদের পসরা সাজিয়েছেন, যেখানে পাওয়া যাবে নানা ধরনের ফ্যাশন জুয়েলারি, খেলনা, মিষ্টি, গেরস্থালি পণ্যসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। এছাড়া, দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেমন নাগরদোলা, ঘোড়া, টয় ট্রেন, কুমির প্রদর্শনী এবং পুণ্য স্নান।
মেলার আকর্ষণ শুধু ঐতিহ্যবাহী পণ্য বিক্রেতাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, এখানে মানুষের ধর্মীয় আবেগ এবং আধ্যাত্মিকতা ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়। সারা দেশে থেকে আসা ভক্তরা বিভিন্ন আধ্যাত্মিক গান যেমন লালন, মুর্শিদী ও ভাটিয়ালী গান পরিবেশন করেন, যা মেলার পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
এস এম রিফাতুল ইসলাম, যিনি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে আসেন, বলেন, “এটি আমাদের জন্য একটি পবিত্র সময়। প্রতিবছর আমি এখানে এসে আমার মান্নত পূর্ণ করি। সারা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এই মেলা খুবই জনপ্রিয়।”
অন্যদিকে, বরিশাল থেকে আসা কলেজ শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, “ঐতিহ্যবাহী খানজাহান মেলা দেখার জন্য আমি প্রতিবছরই আসি। গত দু’বছর মেলা হয়নি, তবে এবার মেলা দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।”
মাজারের প্রধান খাদেম ফকির তারিকুল ইসলাম জানান, হযরত খানজাহান (রহ.) চৌদ্দশ খ্রিষ্টাব্দে বাগেরহাটে এসেছিলেন এবং তার মৃত্যুর পর থেকে এই মেলা ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “খানজাহান (রহ.) এই মাজারে কাউকেই খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। তার মাজারে জিয়ারত করলে, ভক্তরা তাদের সব মনোবাসনা পূর্ণ করেন।”
মেলায় আগত ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ জানিয়েছেন, মেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এই ঐতিহ্যবাহী মেলা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা হিসেবে কাজ করে, যেখানে ভক্তরা একত্রিত হয়ে তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করেন এবং সামাজিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেন।
#খাঞ্জেলী_মেলা #হযরত_খানজাহান_রহ #বাগেরহাট #ধর্মীয়_উৎসব #বাংলাদেশ


