হামাস কি ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারবে : বিশ্লেষণ

ফিলিস্তিনের গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন শনিবার (২৫ নভেম্বর)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশা, চার দিনের যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ বন্ধের পথ তৈরি করে দেবে। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস কি ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? জল, স্থল ও আকাশপথে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বাত্মক হামলায় হামাসের যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ধ্বংসযজ্ঞ দেখে তা বিষয়টি কিছুটা বোঝা যায়।

ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা বৃহস্পতিবারই গাজায় হামাসের ৩ শতাধিক অবস্থান লক্ষ্য করে তারা বোমা হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে হামাসের সামরিক ঘাঁটির পাশাপাশি সুড়ঙ্গ, অস্ত্রাগার, অস্ত্র তৈরির কারখানা ও ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিও ছিল। এ দাবি কতটুকু সত্য তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়। ৪৮ দিন ধরে নির্বিচার টানা বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে একজন হামাস যোদ্ধাকেও আটক করতে এবং হামাসের কোনো সামরিক স্থাপনাকে ধ্বংস করার সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

ইসরায়েলি সামরিক সূত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, উত্তর গাজায় হামাসের সব সামরিক ঘাঁটি ও সেনা ইউনিট  তারা ঘেরাও করে ফেলেছে তাদের সেনারা। শেখ ইজলিন, শাতি শরণার্থীশিবির, বেইত হানুম, রিমাল, জেইতুন, জাবালিয়া ও বেইত লাহিয়ার মতো এলাকাগুলো থেকে হামাস যোদ্ধাদের হটিয়ে দেওয়ার দেওয়ারও দাবি করছে ইসরায়েলি আর্মী।  উত্তর গাজার অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে হামাস। তাদের বহু যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।

আমেরিকা ও ইউরোপের সর্বাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত হওয়ার পরও হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে নিজেদের ৭১ সেনা হারানোর কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল। ধ্বংস হয়েছে তাদের ৩৬০ সামরিক যান ও ট্যাংক। যদিও ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বলছেন, নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা এরচেয়ে অনেক বেশি।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও গাজায় বিপুল প্রাণহানির ঘটনায় হামাস আবার সেই শক্তি নিয়ে  ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি?  বিষয়টি খুবই জটিল।হামাসকে নিয়ন্ত্রণ হারানো এলাকা যেমন পুনরুদ্ধার করতে হবে, তেমনি ব্যাপক সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শূন্যতা পূরণ করতে হবে।

 ইসরায়েলি সূত্রের প্রচারণা  উত্তর গাজায় হামাসের অন্তত ১০টি ব্যাটালিয়নে যোদ্ধার সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। অনেক কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এসব ব্যাটালিয়নে আনুমানিক ১৪০ কোম্পানি যোদ্ধা ছিলেন। প্রতিটি কোম্পানিতে ১০০ যোদ্ধা থাকেন। ইসরায়েলি এ দাবি সত্য হলে তারা কি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতো? হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার শপথ নিয়ে হামলাা শুরু করে দখলদার ইসরায়েল।

টানা দেড় মাস ধরে নজীর নৃশংসতা ও গণহত্যা এবং বিপুল সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। পরে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দেওয়া হামাসের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল। একেই বিশ্লেষকরা এ যুদ্ধে হামাসের কাছে ইসরায়েলের সুস্পষ্ট পরাজয় বলে অভিহিত করেছেন।

গত ৭ অক্টোবরের আগে হামাসের যোদ্ধা ছিল আনুমানিক ৩০ হাজার। ইসরায়েলে আকস্মিক ওই হামলা চালাতে গিয়ে তাদের কিছু সংখ্যক নিহত হন। সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, উত্তর গাজায় নতুন করে যোদ্ধা মোতায়েন ছাড়া হামাসের হাতে বিকল্প নেই। যুদ্ধবিরতি চললেও ইসরায়েলি বাহিনী হামাস যোদ্ধাদের ঘিরে রাখবে। এ সময় হামাস তাদের সেনা ইউনিট কিছুটা এদিকসেদিক করতে পারলেও পূর্বের অবস্থায় ফেরা কি সম্ভব হবে?

ইসরায়েল বলেছে, যুদ্ধবিরতি শেষে গাজায় আবার হামলা চালাবে তারা। ফলে মনে হচ্ছে, হামাস সহজে ঘুরে দাঁড়ানো হয়ত কঠিন হবে। হামাসও ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, আমরাও প্রস্তত আমাদের হাত ট্রিগারের ওপর থেকে নড়বে।  সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news