ওয়াশিংটনের করিডরে এই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে জোরালো—ডোনাল্ড ট্রাম্প কি আমেরিকাকে বিশ্বমঞ্চ থেকে একঘরে করে ফেলছেন? গত ৮০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ট্রাম্প সেটাকে উল্টেপাল্টে দিয়েছেন। সামরিক শক্তিতে এখনো আমেরিকা শীর্ষে, কিন্তু কূটনৈতিক অঙ্গনে এর ভাবমূর্তি এখন চরম সংকটে।

ট্রাম্পের নীতিই বলছে—"আমেরিকা ফার্স্ট" মানে বাকি বিশ্ব লাস্ট। গত জুলাইয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি একের পর এক সিদ্ধান্তে বদলে দিয়েছেন বৈশ্বিক সমীকরণ। পানামা খাল কিনে নেওয়ার হুমকি, গ্রিনল্যান্ড দখলের ইঙ্গিত, কানাডাকে "৫১তম রাজ্য" বলে উপহাস—এসব যেন ঔপনিবেশিক যুগের স্বপ্ন দেখাচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর আমেরিকাকে।

বাণিজ্যে যুদ্ধ, যুদ্ধে বাণিজ্য
ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে বাণিজ্য নীতিতে। চীনকে টার্গেট করে ৬০% শুল্ক বসালেও ইউরোপীয় মিত্রদের ওপরও একের পর এক শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি। যদিও শেয়ারবাজারে ধস নামায় বেশিরভাগ শুল্ক স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন। ঐতিহাসিক মেলভিন লেফলারের মতে, "ট্রাম্প ১৯শ শতকের সামাজিক ডারউইনিজমে ফিরে গেছেন—যেখানে শক্তিশালীরাই টিকে থাকে। তিনি মিত্র-শত্রু সবাইকে বাণিজ্যিক প্রতিপক্ষ ভাবেন।"

মিত্রদের সাথে ঠান্ডা যুদ্ধ
নেটো ও ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন বরফের মতো ঠান্ডা। উপ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্স তো সরাসরি বলেই দিয়েছেন, "ইউরোপীয়রা আমেরিকার রক্ষা ব্যয় বহন করছে না।" ইউক্রেন যুদ্ধে জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে "অকৃতজ্ঞ" বলে ফাটিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রতিক্রিয়ায় ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা ক্যালাস বলেছেন, "মুক্ত বিশ্বের এখন নতুন নেতৃত্ব দরকার।"

শান্তিরক্ষী নাকি অশান্তির বীজ?
গাজায় যুদ্ধবিরতি করাতে ট্রাম্প দাবি করেন স্টিভ উইটকফের কূটনৈতিক সাফল্যের। কিন্তু ইসরায়েল আবারও গাজায় হামলা চালিয়ে মানবিক সংকট তৈরি করেছে। ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তির আলোচনা চললেও উত্তর কোরিয়া আবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর কথায়, "ইউক্রেন সমাধান থেকে হয়তো আমেরিকা সরে দাঁড়াবে।" অর্থাৎ শান্তিরক্ষীর ভূমিকায় ট্রাম্পের রেকর্ড মিশ্র।

ডলারের পতন, বিশ্ব অর্থনীতির মোড় পরিবর্তন
ট্রাম্পের আমলে ডলারের মান ৯% পড়েছে। ভ্যান্স এটাকে "আমেরিকান উৎপাদকের জন্য ভালো" বলে দাবি করলেও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং সতর্ক করেছেন, "বিধি-ভিত্তিক বিশ্বায়নের যুগ শেষ।" ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফলে ভিয়েতনাম-মেক্সিকোর মতো দেশগুলো লাভবান হলেও ইউরোপ-এশিয়ার বাজারে আমেরিকান পণ্যের চাহিদা কমেছে।

কী হবে আগামী দিনে?
বাইডেন আমলে মিত্রদের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের যে চেষ্টা হয়েছিল, ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিয়েছেন। চীনের উত্থান এবং রাশিয়ার সাথে ট্রাম্পের "ব্যবসায়িক সম্পর্ক" বিশ্ব রাজনীতিকে নতুন মেরুকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। লেফলারের ভাষায়, "১৯৪৫ সালের পর যে উদার বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, সেখানে আমেরিকা আর ফিরে যাবে না।"

ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, তিনি আমেরিকাকে "অন্যের যুদ্ধে জড়ানো বন্ধ" করছেন। কিন্তু সমালোচকদের মতে, এর মূল্য দিতে হবে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে। প্রশ্ন হলো—বিশ্ব যখন বহুমেরু হয়ে উঠছে, তখন কি ট্রাম্পের একতরফা নীতি আমেরিকাকে সমৃদ্ধ করবে, নাকি বিচ্ছিন্ন করবে? খবর এনডিভির

#ট্রাম্প_কূটনীতি #আমেরিকা_ফার্স্ট #বৈশ্বিক_রাজনীতি #ডলারের_পতন #মিত্রদের_বিরাগ

news