ইসরায়েলি হামলায় গাজার মধ্যাঞ্চল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে দেড় লাখ ফিলিস্তিনি
জাতিসংঘ বলছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক নিয়ে হামলা শুরু করায় ওই এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের পূর্বাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে ট্যাংকসহ ইসরায়েলি বাহিনী। বিবিসি জানায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সম্প্রতি মূলত বুরেইজ এবং পার্শ্ববর্তী নুসেইরাত ও মাঘাজি শরণার্থী শিবিরকে টার্গেট করে হামলা শুরু করেছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজা জুড়ে অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ১১ সপ্তাহের যুদ্ধে গাজায় ২১ হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উপত্যকার একটি বিস্তৃত এলাকা খালি করতে নির্দেশ দিয়েছে। এই এলাকার মধ্যে রয়েছে গাজার মধ্যাঞ্চলের বুরেইজ ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবির । এই এলাকার প্রায় ৯০ হাজার বাসিন্দা এবং ৬১ হাজার গৃহহীন বাসিন্দাদেরকে দক্ষিণাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ শহরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে জাতিসংঘ বৃহস্পতিবার হুশিয়ার করে বলেছে যে, ওই ফিলিস্তিনিদের আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই কারণ দেইর আল-বালাহ এরইমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
৬০ বছর বয়সী ওমার বলেন, তিনি তার পরিবারের আরো কমপক্ষে ৩৫ জন সদস্যদের সাথে বুরেইজ শিবির থেক পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি ফোনে বলেন, “সেই সময় চলে এসেছে, আমার মনে হয়েছিল এটা কখনোই হবে না, কিন্তু মনে হচ্ছে বাস্তুচ্যুত হওয়া অবশ্যম্ভাবী।” “এই নৃশংস ইসরায়েলি যুদ্ধের কারণে আমরা এখন দেইর আল-বালাহতে একটি তাবুতে বসবাস করছি।”
জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ এর গাজা বিষয়ক পরিচালক টম হোয়াইট বলেন, আরো বেশি মানুষকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা শহরের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। “তার মানে খুবই ছোট একটি উপত্যকায় আরো বেশি মানুষ আসছে যাদেরকে ধারণ করার ক্ষমতা এর নেই।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রাফায় একটি ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ২০ জন নিহত হয়েছে। ওই ভবনটিতে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঘোষণা করেন যে, মাঘাজি শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছে। এই শহরটি বেইত লাহিয়া থেকে উত্তরাঞ্চলে এবং খান ইউনিস থেকে দক্ষিণে অবস্থিত।
বেইত লাহিয়ায় চারটি আবাসিক ভবন ধ্বংস করার সময় অন্তত ৩০ জন মারা গেছে বলে ফিলিস্তিনি মিডিয়া জানিয়েছে। স্থানীয় টেলিভিশন সাংবাদিক বাসেল খেইর আল-দিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েড প্রেস-কে বলেছে, তার পরিবারের ১২ জন সদস্য এদের মধ্যে একটি ভবনের ধ্বংস্তুপের নিচে আটকে পড়েছে এবং তারা সবাই মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদের আরো ৯ জন প্রতিবেশীও নিখোঁজ রয়েছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, খান ইউনিসের আল-আমাল হাসপাতালের কাছে একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি গোলার আঘাতে অন্তত ১০ নিহত হয়। এর আগের দিন একই ধরণের আরেকটি ঘটনা এই হাসপাতালের সামনে ঘটে এবং এতে প্রায় ৩১ জন মারা যায়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, শহরটি “হামাসের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের একটি প্রধান কেন্দ্র।” তিনি বলেন, তৃতীয় দিনের মতো বুরেইজ এলাকায় যুদ্ধ করছে ইসরায়েলি সেনারা। তিনি আরো বলেন, তারা “অনেক সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহৃত অবকাঠামো ধ্বংস করছে।”
শহরের বাসিন্দারা রয়টার্সকে বলেছে, বৃহস্পতিবারও তীব্র যুদ্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো ঘনবসতিপূর্ণ বুরেইজ শিবিরে উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে ঢুকে পড়েছে। হামাস একটি ভিডিও পোস্ট করেছে যেখানে বলা হচ্ছে যে, হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনা এবং যানকে টার্গেট করছে।
অন্যদিকে আইডিএফ বলেছে, রোববার মাঘাজিতে বিমান হামলার সময় “বেসামরিক নাগরিকদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে” তার জন্য তারা অনুতপ্ত। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ওই হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছিল।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধবিমানগুলো “দুটি টার্গেটকে লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছিল যেগুলোর পাশেই হামাসের যোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিল।”সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা
এনবিএস/ওডে/সি


