হামাসের উপপ্রধান নিহত, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বন্দী মুক্তি আলোচনা ভেস্তে গেছে

প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রবাসী পলিটব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া তার ডেপুটি সালেহ আল-আরুরির হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিপূর্ণ সন্ত্রাসবাদ ও লেবাননের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে মূল্য দিতে হবে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে এক ড্রোন হামলায় হামাসের উপপ্রধান আরুরি নিহত হন। হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপ প্রধান আরুরিকে গত ৭ অক্টোবরের ইসরাইল বিরোধী আল-আকসা তুফান অভিযানের ‘প্রধান স্থপতি’ বলে অভিহিত করা হয়। হামলায় আরুরি ছাড়াও হামাসের সামরিক বাহিনী আল-কাসসাম ব্রিগেডের দুই কমান্ডারসহ মোট ছয়জন নিহত হন।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন আরুরি নিহত হবার পর যে কোনো উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা তৈরি আছেন। 

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ওই গুপ্তহত্যার পরপরই এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, শহীদ আরুরি ও তার সহকর্মীদের তাজা রক্ত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের হাজার হাজার শহীদের রক্তের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এই রক্ত বৃথা যাবে না।

ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের প্রধানও বৈরুতে ইসরাইলি সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে জিয়াদ আন-নাখালাহ বলেছেন, শেখ সালেহ আল-আরুরি ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে একজন বিশিষ্ট এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতা ছিলেন। 

ইরান বলেছে, গাজা যুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি ও হতাশা থেকেই ইহুদিবাদী ইসরাইল হামাস নেতা সালেহ আল-আরুরিকে হত্যা করেছে। 

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি বলেছেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর আল-আকসা তুফান অভিযানে ‘ভয়াবহ পরাজয় ও অপূরণীয় ক্ষতির’ শিকার হয়ে গুপ্ত হত্যার পথ বেছে নিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। 

এদিকে গাজা ছেড়ে ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে চলে যাওয়া এবং উপত্যকায় নতুন ইসরায়েলি বসতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে দুই ইসরায়েলি মন্ত্রী সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার মঙ্গলবার এ ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেন।

সম্প্রতি ওই দুই ইসরায়েলি মন্ত্রী বলেছেন, তারা মনে করেন গাজা থেকে অন্য দেশে চলে যাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের উদ্বুদ্ধ করা উচিত। গাজায় ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ফেরত পাঠানো উচিত বলেও মনে করেন তারা। কিন্তু মিলার বলেন, তেল আবিবের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ওয়াশিংটন। এ ধরনের বক্তব্যকে উসকানিমূলক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করেন মিলার। মিলার আরও বলেন, গাজা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড এবং তা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড হিসেবেই থাকবে। হামাস ভবিষ্যতে আর এর নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারবে না। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসরায়েলকে হুমকি দিতে পারবে না।

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গ্যভির গত সোমবার বলেছেন, তিনি গাজার বাসিন্দাদের অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে উদ্বুদ্ধ করাকে সমাধান হিসেবে দেখছেন। ২০০৫ সালে ইসরায়েল একতরফাভাবে গাজা থেকে তাদের সর্বশেষ সেনা এবং বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে ১৯৬৭ সাল থেকে তাদের দীর্ঘ অবস্থানের অবসান হয়। তবে সেনা সরিয়ে নিলেও গাজা সীমান্তের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে থেকে যায়।

গাজার জনসংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে সেখানকার ৮৫ শতাংশ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া লোকজন নিজেদের বসতভিটায় ফিরতে শুরু করেছেন। তবে দখলদার সেনাদের বর্বর আগ্রাসনে এরই মধ্যে উত্তর গাজা বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে; সেখানে বসবাসের জন্য তেমন কোনো ঘরবাড়ি আর আস্ত নেই।

উত্তর গাজায় ফিরে আসা এক নারী আল-জাজিরা টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, লোকজন তাদের বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপের ভেতরেই শুয়ে বসে সময় পার করছেন। বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতরে এখনো রক্ত এবং মৃত্যুর চিহ্ন বিদ্যমান।

এই নারী বলেন, ব্যাপক অপরাধ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইহুদিবাদী সেনারা। কিন্তু এখানকার লোকজন সবসময়ই দখলদার সেনাদের চেয়ে নৈতিক শক্তি ও মনোবলের দিক দিয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। আরেক নারী বলেন, খাদ্য এবং পানির অভাব থাকলেও তিনি কখনো উত্তর গাজা ছেড়ে যাবেন না। তিনি বলেন, যতই দুঃখ-কষ্ট আসুক আমি আমার ভূমি এবং পরিবার ছেড়ে যাব না।

সোমবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গাজা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। যুদ্ধের অবসান নয় বরং সেনাদের বিশ্রামের জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইৎজাক বারিক বলেছেন, সেনারা গাজার গাদায় আটকে গেছে এবং তারা হামাসকে ধ্বংস করার মতো অবাস্তব লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের মারিভ পত্রিকায় গত সোমবার এক কলামে তিনি এই কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল একটি ‘দুষ্ট চক্রের’ মধ্যে আটকা পড়েছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রের তথ্য’ উপেক্ষা করার জন্য এবং কল্পনার জগতে বাস করার জন্য সরকারকে নিন্দা করেছেন।সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news