ইসরায়েল যখন ইরানে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখন মস্কো‑তেহরান ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। শুক্রবার তুর্কমেনিস্তানের রাজধানীতে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এতে উভয় পক্ষ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই ইসরায়েলের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কো ও তেহরান নিজেদের সম্পর্ক জোরদার করছে। এমনিতেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুই দেশ ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। এখন মধ্যপ্রাচ্য সংকটের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে এ সম্পর্ক আরও জোরদারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন দুই নেতা।
রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানাচ্ছে, বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমরা সক্রিয়ভাবে পরস্পরের সঙ্গে কাজ করছি। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি এক।’
বৈঠকে একই অবস্থান ব্যক্ত করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান। তিনি বলেন, রাশিয়া ও ইরানের এমন উল্লেখযোগ্য কিছু সক্ষমতা রয়েছে, যা দিয়ে দুটি দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে। ইরনার বরাত দিয়ে জেরুসালেম পোস্ট জানায়, ইরানের প্রেসিডেন্ট বৈঠকে বলেছেন, ‘অন্যদের তুলনায় বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি কাছাকাছি।’
আলোচনায় পুতিন ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে বলে জানান। এখানে বলা প্রয়োজন যে, ইরানের অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট হলো অর্থনীতি। দুই বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়া অভিযান শুরুর পর মস্কোর সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক দৃঢ় হয়। বিশেষত দুই দেশের মধ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, সশস্ত্র ড্রোনসহ সামরিক সরঞ্জাম বিনিময় হয়। বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপ ইতিবাচকভাবে দেখেনি।
শুক্রবার উভয় দেশের বৈঠকের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, রাশিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের সাথে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার ব্যাপারে তারা ভাবছে। আগামী সোমবারের মধ্যেই এমনটি হতে পারে বলে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
মস্কো–তেহরান সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টি এমন এক সময় সামনে এল, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে ইরান যুদ্ধের সন্নিকটে অবস্থান করছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিপরীতে ইরানে ইসরায়েল যখন পাল্টা হামলার কথা ভাবছে এবং এ বিষয়ে নানা যুদ্ধংদেহী বক্তব্য দিচ্ছে, ঠিক তখনই এ ধরনের আলোচনা নড়চড়ে বসতে বাধ্য করছে বিশ্বনেতাদের। বলে রাখা ভালো যে, মস্কোর দিক থেকে বহুবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা ও সতর্কতা জানানো হয়েছে। বিশেষত আমেরিকাকে লক্ষ্য করে দেওয়া এ সতর্কতার মূলে রয়েছে ন্যাটো। এর সঙ্গে মার্কিন মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের হয়ে দ্বৈরথে জাড়নোটা বড় সংকটের জন্ম দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
কারণ, ইরান প্রশ্নে আবার আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি ইসরায়েলের সমার্থক। লাওসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সরাসরি ইরানকে বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ইসরায়েলকে ঠিক অনুরূপ অভিধা দিয়েছেন। ফলে এই পাল্টার পথ ধরে বড় বিপত্তি বাধতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।