ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনাবাহিনীর লেবানন ভূখণ্ডে প্রবেশের প্রচেষ্টা একদিকে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং জাতিসংঘের বাহিনীর উপর শাসকগোষ্ঠীর আক্রমণ এর পরিধি বাড়িয়েছে। ইসরালি শাসক গোষ্ঠীর অপরাধ এবং তার পশ্চিমা সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।
লেবাননের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির বক্তব্যের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর যে তিনি বৈরুত ও এর উপকণ্ঠে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসন কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গ্যারান্টি পেয়েছেন এবং কুদসের দখলদার সেনাবাহিনী দক্ষিণ শহরতলির আবাসিক ভবনে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে।
এমনকি ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী লেবাননের দক্ষিণে অবস্থিত মোহিবিব গ্রামকে বিস্ফোরক ব্যবহার করে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এই ঐতিহাসিক গ্রামে হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর পুত্র বেনিয়ামিনের ২১০০ বছরের পুরানো মাজার অবস্থিত এবং এর মাধ্যমে এটা দেখায় যে দখলদার এই অবৈধ সরকার ইহুদিদের পবিত্র জিনিসগুলোকেও মূল্য দেয় না।
একই সময়ে দক্ষিণ লেবাননে অবস্থিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী আনফিল ঘোষণা করেছে যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের একটি মেরকাভা ট্যাঙ্ক এই বাহিনীর একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে গুলি চালিয়েছে।
পূর্বে লেবাননে ইহুদিবাদী সৈন্যদের ৩ টি দলের আগমনের ঘোষণা করার সময় আনফিল ঘোষণা করেছিল যে দখলদার বাহিনীর আক্রমণের পরে তার বাহিনীর ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছে।
এদিকে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর আক্রমণের কারণে লেবাননে মোট শহীদের সংখ্যা ২৩৮৭ এ পৌঁছেছে এবং আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৮৮৮তে পৌঁছেছে।
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় ইউনিসেফের মুখপাত্র আরও বলেছেন যে লেবাননের ১২ লাখ শিশু এবং অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের অবিলম্বে ভাল এবং ব্যাপক শিক্ষার অ্যাক্সেস প্রয়োজন এবং ঘোষণা করেছে যে লেবাননের পাবলিক স্কুল বছরের শুরু থেকেই স্থগিত করা হয়েছে এবং প্রায় ৬০ ভাগ স্কুল বর্তমান আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বর্তমানে দেড় মিলিয়ন লেবানিজ তাদের নিজ দেশ, সিরিয়া, ইরাক এবং অন্যান্য অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত এবং তাদের সম্পত্তি,বাড়ি এবং দিনযাপনে প্রবেশাধিকার নেই। যদিও ইহুদিবাদী ইসরাইলের অন্যতম লক্ষ্য হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে লেবাননে গৃহযুদ্ধ বাধানো। কিন্তু লেবাননের খ্রিস্টান এবং সুন্নিরা শিয়া শরণার্থী এবং অভিবাসীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল এবং এইভাবে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রকে বানচাল করতে সহায়তা করেছিল।
একই সময়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ অধিকৃত ফিলিস্তিনের উত্তরে অবস্থিত বসতি এবং দখলকৃত ভূমির গভীরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে লেবাননের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের জন্য ইহুদিবাদী শাসকের সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
লেবাননের হিজবুল্লাহ ঘোষণা করেছে যে তারা "নাসর ১" ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইহুদিবাদী সরকারের একটি সামরিক ব্যারাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।বুধবার বিকেলে ইহুদিবাদী অনুপ্রবেশকারীরা আল-কুজাহ শহরের উপকণ্ঠে প্রবেশ করার পরে প্রতিরোধ বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায় এবং ৪৮ জন হতাহত হয়।
এছাড়াও, লেবাননের হিজবুল্লাহ ঘোষণা করেছে যে তারা লেবাননের সীমান্তে "আল-লাবুনেহতে গাইডেড মিসাইল দিয়ে দুটি জায়নবাদী মেরকাভা ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে এবং এর দখলদাররা নিহত বা আহত হয়েছে।
সীমান্ত এলাকার একশত কিলোমিটার বরাবর ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর ৫০টিরও বেশি সেনা ঘাঁটি ছিল এবং হিজবুল্লাহর ৩০০০টি অপারেশনে এই সমস্ত ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করে। এই কেন্দ্রগুলো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হয়ে গেছে যে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এসব এলাকায় তাদের নিজস্ব পদাতিক বাহিনী মোতায়েন করতে পারে না। ইহুদিবাদী শাসকের গোলানি ব্রিগেডকে আঘাত করার এবং হাইফাকে লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এটা দেখায় যে হিজবুল্লাহর একটি উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। যদিও এই সরকার প্রতিরোধকামী কমান্ডারদের হত্যা করে এই আন্দোলনকে শারীরিকভাবে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল তবে এটি স্থলভাগে এখনো তেমন সুবিধা করতে পারে নি বা হিজবুল্লাহর রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোনকে আঘাত করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
প্রকৃতপক্ষে কৌশলগতভাবে ইসরাইল উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে কিন্তু ইসরাইলিদের বাস্তুচ্যুত করা এবং তাদের শহরগুলোকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার হিজবুল্লাহর কৌশল আরও সফল হয়েছে। ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী এখনও হিজবুল্লাহর এই লক্ষ্যকে পরাস্ত করতে পারেনি এবং তারা কেবল লেবাননের অবকাঠামো এবং বাড়িঘর ধ্বংস করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে।
পার্সটুডে